Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

মাইলসের চার দশক উদযাপন সববয়সীর উন্মাদনায়

বিনোদন ডেস্ক : ভাইকিংস ব্যান্ড মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোনে যখন উচ্চারণ করল শান্তি চাই-তখনই ইন্টারন্যাশনাল বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির রাহদর্শন হল সোল্লাসে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ভাইকিংসের তন্ময় তানসেন মাইলসের জনপ্রিয় গান ‘শান্তি চাই’ গেয়ে শোনান। দর্শক-শ্রোতারাও তন্ময়ের সাথে পুরোটা সময় কণ্ঠ মেলান। মাইলস মানেই তারুণ্য, মাইলস মানেই উচ্ছ্বাস- এর ব্যত্যয় ঘটেনি এদিন। পাঁচটি ব্যান্ডদল মাইলসের শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো তাদের মতো করে গেয়ে শোনান।

তন্ময় অবশ্য মঞ্চে মাইলসের গান গাইতে পেরে নিজের অলিন্দে পুঞ্জীভূত উচ্ছ্বাস আড়াল করতে পারলেন না। বললেন, ‘এই মঞ্চে মাইলসের গান গাইতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে হচ্ছে।’

উপস্থাপক আজরা মাহমুদ মাইলসের ৪০ বছরপূর্তির অনুষ্ঠান সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঘোষণা করলেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রবেশপথে সুদীর্ঘ শ্রোতা সারি দেখা যায়। তরুণ প্রজন্ম থেকে সব বয়সী শ্রোতার সম্মিলন ছিল চোখে পড়ার মতো। ভাইকিংসের পরেই মঞ্চে ওঠে দুই প্রজন্মের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ওয়ারফেইজ। ওয়ারফেইজের পলাশ গাইতে শুরু করেন ‘শেষ ঠিকানা।’ লতিফুল ইসলাম শিবলির লেখা এই গান যেমন মাইলসের কণ্ঠে জনপ্রিয়, তেমনি জনপ্রিয় ওয়ারফেইজ। জনপ্রিয়তার এই সংমিশ্রণ তরুণদের মধ্যে তৈরি করে ভিন্ন উন্মাদনা।

মাইলসের অন্যতম গীতিকার শিবলীকে অবশ্য মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি জানান মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর নেপথ্যের কথা। অন্যান্য কনসার্টের চেয়ে মাইলসের ৪০ বছর পূর্তির কনসার্ট ছিল একেবারে আলাদা, ছিল না বসার কোনো জায়গা। শ্রোতারা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলেন পুরো অনুষ্ঠান। অবশ্য মাইলস মানেই দাঁড়িয়ে সকলের সঙ্গে কণ্ঠ মেলানো। তবে রাজদর্শন হলের পেছনের ওপরে এক শ্রেণির জন্য বসার ব্যবস্থা ছিল। অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপন বিরতিও ছিল উপভোগ্য।

পৌনে আটটায় মঞ্চে ওঠে সোলস। মূল ভোকাল পার্থ বড়ুয়া ছিলেন না এদিন। মাইলসের শ্রোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ দেন নাসিম আলি। এরপর মঞ্চে ওঠে দলছুট ব্যান্ডদল। ফিডব্যাক গেয়ে শোনায় ‘খুঁজে বেড়াও যারে।’ এরপরে শুরু হয় মাইলসের নিজস্ব পরিবেশনা।

মাইলস শুরুতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সপ্তাহে পাঁচ দিন ইংরেজি গান কাভার করতো। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তারা প্রথম গান করে ১৯৮২ সালে। সে বছরই শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম লাইভ কনসার্ট করে। একই বছর প্রকাশ পায় তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘মাইলস’ [ইংরেজি]।

১৯৯১ সালে বের করে প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। ১৯৯৩ সালে ‘প্রত্যাশা’। অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে কথা হয়েছিল শাফিন আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, “বাংলা ব্যান্ড ইতিহাসে ‘প্রত্যাশা’র মতো আর কোনো ক্যাসেট বিক্রি হয়নি। গান শুনতে শুনতে ক্যাসেট ভেঙে গেলে মানুষ আবার ক্যাসেট কিনত, সংগ্রহে রাখত। এই ক্যাসেটের প্রতিটি গান ছিল শ্রোতার মুখস্থ।”

এ পর্যন্ত মাইলসের প্রকাশিত অ্যালবাম ১১টি। এর বাইরে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ‘বেস্ট অব মাইলস ১’ ও ‘বেস্ট অব মাইলস ২’। প্রকাশ করে লস অ্যাঞ্জেলেসের ডিস্কো রেকর্ডিং। ১৯৯৮ সালে ভারতের আশা অডিও থেকে প্রকাশিত হয় ‘বেস্ট অব মাইলস ১’ ও ‘বেস্ট অব মাইলস ২’। দেশ-বিদেশে এ পর্যন্ত ৩৫০টির বেশি কনসার্ট ও অনেক চ্যারিটি শো করেছে তারা। প্রকাশিত গান দুই শতাধিক। মানাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি গান টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে বানানো হয়। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ব্যান্ডটি এগিয়ে গেছে।’

৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ছয় মাসব্যাপী ২৮টি কনসার্ট করেছে মাইলস। এই আয়োজনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘মাইলস ফর্টিথ অ্যানিভার্সারি লাইভ’ শিরোনামে চার মাসব্যাপী কনসার্ট হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়। প্রথম কনসার্টটি হ ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে হবে ‘ম্যাজিক অব মাইলস’।

শুরুতে চারটি বিভাগীয় শহর—চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে তাদের পরিবেশনা সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকায় গ্র্যান্ড কনসার্ট দিয়ে শেষ হলো এই আয়োজন। বর্তমান লাইন আপ—শাফিন আহমেদ (ভোকাল ও বেইস গিটার), হামিন আহমেদ (লিড গিটার ও ভোকাল), মানাম আহমেদ (কি-বোর্ড), ইকবাল আসিফ জুয়েল (গিটার ও ভোকাল) ও সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য (ড্রামস)।

Exit mobile version