পাইলসের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে সচেতন হোন

অনলাইন ডেস্ক : অনেকেরই হজমের সমস্যা না থাকলেও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। কোনো কোনো সময় হয়ে ওঠে যন্ত্রণাদায়কও। এ ধরনের যে কোনো সমস্যাকেই হেমোরয়েডস বা সহজ ভাষায় পাইলসের গোত্রে ফেলে দেন অনেকে। কিন্তু আসলে হেমোরয়েডসের বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যার প্রত্যেকটির উপসর্গ কাছাকাছি হলেও চিকিৎসা আলাদা।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষ ভাবে চিনে নেওয়া যায় পাইলসের লক্ষণগুলো। সেসব হলো-

পাইলসের লক্ষণগুলো অনেকেই জানেন, কিন্তু নেপথ্যের কারণ অনেকেরই অজানা। দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া যাদের মলত্যাগের সময়ে অকারণ বেগ প্রদানের বদভ্যাস রয়েছে, তারাও এই রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারেন।

মলদ্বারে ব্যথা বা মলত্যাগের সময় রক্ত পড়তে শুরু করলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। সাধারণ রোগীর পক্ষে পাইলস, ফিসারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, উপসর্গ প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। প্রতিটির ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আবার বেড়ে গেলে অস্ত্রোপচারও করাতে হতে পারে। সম্পূর্ণ নিরাময়ের পরেও কখনো কখনো ফিরে আসতে পারে এসব।

পাইলসের ক্ষেত্রে অনেক সময় শুধু রক্তক্ষরণ হতে পারে, ব্যথা নয়। তবে মাত্রা বেড়ে গেলে পাইলস মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে বেরিয়ে আসার লক্ষণটি ফার্স্ট ডিগ্রি পাইলসের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

এটি অসুখের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়। সেকেন্ড ডিগ্রি পাইলসে মলত্যাগ করার সময় শুধু লাম্প বেরিয়ে আসে। থার্ড বা ফোর্থ ডিগ্রির ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া খুব বেশি রাস্তা খোলা থাকে না। আবার হেমোরয়েডসের ক্ষেত্রে রক্তনালী আক্রান্ত হয়। ব্যথার মাত্রাও বেশি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিকর্ষের প্রভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এমনিই টান পড়ে। পাইলসের ভয় থেকে মুক্ত থাকার জন্য খেয়াল রাখা উচিত, যেন মল কিছুতেই শক্ত না হয়। এজন্য ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট অনুসরণ করা প্রয়োজন।

পানি প্রচুর পরিমাণে পান করা দরকার। মলত্যাগের অভ্যাস যেন মসৃণ হয়। ক্রনিক কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকলে, তা সারিয়ে তোলা দরকার। মলত্যাগের সময়ে অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়াও অনেক সময়ে অতিরিক্ত মেদবৃদ্ধি, ভারী জিনিস তোলা বা গর্ভাবস্থার কারণেও পাইলসের সমস্যা হতে পারেন।

উপসর্গ

সাধারণত হেমোরয়েডসের উপসর্গ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ, দুই ভাবেই প্রকট হয়ে ওঠে। আলাদাভাবে হোক কিংবা একসঙ্গে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসাও দেরি করে শুরু করার প্রবণতা দেখা যায়। পায়ুদ্বারের বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রে উপসর্গ আলাদা। পাইলস এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত অসুখ। এর মূল লক্ষণগুলি হলো—

পায়ুদ্বারকে ঘিরে শক্ত, যন্ত্রণাদায়ক লাম্প অনুভূত হবে প্রথম দিকে।

মলত্যাগের সময় রক্ত পড়বে, সঙ্গে ব্যথা। অনেক সময়ে ব্যথা না-ও হতে পারে।

মলদ্বারের ভিতরের লাইনিংয়ে চাপ এবং প্রদাহজনিত কারণে তা কালচে রক্তাভ দেখাবে। সংক্রমণের ভয়ও থাকে।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অ্যানিমিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

 প্রতিকারের উপায়

পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে অনেকেই চেপে যান প্রথমে, যা অসুখের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় করে প্রক্টোস্কোপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

প্রথম পর্যায়ে মলম, ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের সাহায্যেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। অসুখের মাত্রা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শল্যচিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কয়টি ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসার শঙ্কা থাকে, যদি না সাবধানে থাকা যায়। এজন্য বদলে ফেলুন লাইফস্টাইল।

পাইলস বা পায়ুদ্বার সংক্রান্ত যে কোনো অসুখের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী অনিয়মিত লাইফস্টাইল। এজন্য খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফিন জাতীয় পানীয়, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত রান্না। পাইলসের রোগীদের পক্ষে শুকনো লঙ্কা বিষতুল্য। ভারী জিনিস তোলাও কিন্তু বারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *