দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক যত শক্তিশালী হোক ছাড় পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে সাধারণ মানুষের হক নিশ্চিত করার জন্য দুদকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনো পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবো না।

প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতি আপনা আপনি কমে যাবে। তাই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের লক্ষ্য যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।

ইসলামের অপব্যাখ্যা রোধকল্পে সারা দেশে ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ এবং সারা দেশে ৬৫০টি মসজিদ-কাম-ইসলামিক সেন্টার নির্মাণে তার সরকারের পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যে কোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আমরা বরদাশত করবো না।

তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আপনারা অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছেন। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হলো। বিগত এক বছর আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। আমরা সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি তা দাবি করবো না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ’।

তিনি বিগত এক বছরে গুটিকয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ এবং সরকারের উদ্যোগ থাকার পরেও ডেঙ্গুরোগে প্রাণহানিতে দুঃখ প্রকাশ করে এ রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, কোনো কোনো মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। আমরা জনগণের সহায়তায় দ্রুত সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।
গুজবের বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকার জন্যও এ সময় দেশবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিস-মশা-বাহিত ডেঙ্গু জ্বর গত বছর সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও এডিস-মশা-বাহিত ডেঙ্গু জ্বরে বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এডিস-মশার বিস্তার রোধে আগে থেকেই সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করলে শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি একটানা তৃতীয় মেয়াদ এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *