যাত্রা শুরু আজ ,একাদশ সংসদের

অনলাইন ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার; বিকাল ৩টায় শুরু হবে অধিবেশন। নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ সচিবালয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন; সংসদের আসন বিন্যাসও নির্ধারণ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও এর জোটসঙ্গী দলগুলোর নির্বাচিতরা গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানকারী বিএনপির বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ না নেওয়ায় তাদের ছাড়াই বসছে প্রথম অধিবেশন। দশম সংসদের মতো একাদশেও বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ভোটভিত্তিক মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি।প্রসঙ্গত ২৮ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন।গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা। সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন অর্থাৎ আজ সকালে ঢাকায় প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। যদিও তাদের জোটসঙ্গী দলের দুজন সাংসদ শপথ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন উপলক্ষে জাতীয় সংসদের ভেতর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে ফুল ও গাছের টব দিয়ে।নতুন অধিবেশনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে সংসদের ডেপুটি সচিব নাজমুল হক বলেন, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন ছাড়াও প্রথম অধিবেশনে সভাপতিম-লী মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব, অধ্যাদেশ উত্থাপন (যদি থাকে), সংসদীয় কমিটি গঠন, সংবিধান বা আইন অনুযায়ী কোনো রিপোর্ট উপস্থাপন (যদি থাকে) ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ থাকে। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রশ্নকাল থাকে না।সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭৪ এর (১) অনুযায়ী কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ সদস্যদের মধ্য হইতে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করিবেন।ফলে অধিবেশন শুরুর পর প্রথমেই হবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন। দশম সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকেই ফের এ পদেই রাখার বিষয়ে রংপুরের নির্বাচনপূর্ব জনসভায় আভাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ডেপুটি স্পিকার কে হবেন, তা এখনো জানা যায়নি। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান সরকার ও জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, এ দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে।সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে। নিয়ম অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচনের সময় ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ শুরু হবে। যদি বর্তমান ডেপুটি স্পিকার পরবর্তী মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে স্পিকার নির্বাচনের পর সাময়িক বিরতি দেওয়া হবে। এ সময়কালে সংসদ ভবনে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে স্পিকার অধিবেশনে বসবেন। পরে স্পিকার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের জন্য সংসদ পরিচালনা করবেন।নির্বাচনের পর নতুন ডেপুটি স্পিকার রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেবেন। যদি বর্তমান ডেপুটি স্পিকার পরবর্তী মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তবে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর বর্তমান ডেপুটি স্পিকার বিদায়ী ভাষণ দেবেন। এর পর অধিবেশনে বিরতি দেওয়া হবে।স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশনের জন্য সভাপতিম-লীর মনোনয়ন দেবেন নতুন স্পিকার। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিম-লীর সদস্যদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন সংসদ পরিচালনা করবেন।তবে এর আগে নতুন স্পিকার সংসদে স্বাগত ভাষণ দেবেন। পরে নতুন স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখবেন।সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে ৫টি অধ্যাদেশ তুলবেন।এর পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও মোনাজাত হবে। পরে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গত সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধিবেশন মুলতবি করা হবে। বর্তমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাবের আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবির রেওয়াজ আছে। সৈয়দ আশরাফ একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলেও তিনি শপথ নেননি। তার মৃত্যুতে এই রেওয়াজের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় তার জন্য অধিবেশন মুলতবি করা হবে।রাষ্ট্রপতির ভাষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। এর পর আবার সংসদের বৈঠক শুরু হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন।নিয়ম অনুযায়ী, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির ভাষণে সরকারে উন্নয়ন কাজের বর্ণনা এবং আগামী দিনের নির্দেশনা থাকে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন রেওয়াজ অনুযায়ী মুলতবি করা হবে। এর পর দিন সংসদের চিফ হুইপ রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। পরে অধিবেশনজুড়ে ওই ভাষণের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে অধিবেশনের শেষ দিকে তা পাস হবে।দশম সংসদে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিল জাতীয় পার্টি। তবে এবার জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের অন্য শরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত সরকারে নেই। তবে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের চেয়ারে বসছেন দলটির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্বে থাকবেন এরশাদের ভাই জিএম কাদের। আর বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন মশিউর রহমান রাঙ্গা।সংসদ কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না; তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা সবাই একদিকে বসবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা যারা এবার মন্ত্রী হননি তারা আগের মতো সামনের সারিতেই বসবেন। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরী গত সংসদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে বসবেন। সংসদ উপনেতায় পরিবর্তন এলেও প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশেই বসবেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রীর পেছনের সারিতে রাখা হচ্ছে, তার পেছনে প্রতিমন্ত্রীরা।আসন বিন্যাস প্রসঙ্গে স্পিকার শিরীন শারমিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম সারিতে যারা সিনিয়র নেতারা ছিলেন, যারা মন্ত্রী হননি তারা ওভাবেই থাকবেন। সেখানে পরিবর্তন হচ্ছে না। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পেছনে তার মন্ত্রীদের দিলে তার জন্য সুবিধা হয়। তিনি নির্দেশনা দিতে পারেন। আমরা এবার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রীর পেছনে মন্ত্রীদের দিতে তার ওপর প্রতিমন্ত্রীদের দিতে। তা হলে একদিকে গোছানো হয়ে গেল।দশম সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগে স্পিকারের আসনের সামনের দিকে বসলেও এবার তার আসন পরিবর্তন হচ্ছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর ডানদিকে আনা হচ্ছে। প্রথম সারিতে সৈয়দ আশরাফের আসনে এবার বসছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আগের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আসনে আসছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পেছনের আসনে বসবেন নতুন চিফ হুইপ। তার পাশে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী।আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের হাসানুল হক ইনু গতবারের মতো আগের আসনেই থাকবেন। তারা দুজন স্পিকারের বামদিকে বিরোধী দলের আসনের পাশে প্রথম সারিতে বসতেন। এ ছাড়া কে, কতবার নির্বাচিত হয়েছে, দলীয় পদ, সাবেক মন্ত্রী, জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এসব বিবেচনা করে আসন বিন্যাস করা হচ্ছে বলে জানান স্পিকার। প্রথমবার নির্বাচিতদের মধ্যে যারা বয়সে প্রবীণ, তাদের নিচের দিকে আসন দেওয়া হচ্ছে। তরুণ এবং প্রথমবার নির্বাচিত সদস্যদের সবার ওপরে আসন দেওয়া হচ্ছে।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপিসহ বড় একটি রাজনৈতিক জোটের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদ গঠিত হয়েছিল। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়, সে হিসেবে দশম সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *