Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

স্ক্যাবিস কেন হয়, প্রতিরোধের উপায় কী

ডিপি ডেস্ক :

 

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামক এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে হয়ে থাকে। এই রোগ হলে রোগী খুব কষ্ট পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন এই রোগ হয়, এর থেকে বাঁচার উপায় কী, তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—কেন হয়

স্ক্যাবিস হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। পরিবার, হোস্টেল, বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন আক্রান্ত হলে দেখা যায় বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি এলাকা, যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন, এমন পরিবেশে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব বেশি ছড়ায়।

লক্ষণ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া হলে সারা শরীরে চুলকানি হয়। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়। রাতে এই চুলকানি বেশি হয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছোট ছোট র‌্যাশ বা ফুসকুঁড়ির মতো দেখা দেয়।

চিকিৎসা না হলে দীর্ঘদিন চুলকানির ফলে একসময় ঘা এর মতো হয়ে যায় এবং সংক্রমিত হয়ে যায়।
এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম, বয়স অনেক বেশি, রোগাক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায়, এইচআইভি আক্রান্ত, তাদের মধ্যে ক্রাস্টেট স্ক্যাবিস নামের এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এটি হলে শরীরে স্কেলিং হয় অর্থাৎ চামড়া উঠতে থাকে, চামড়ার স্তর জমে জমে পুরু হয়ে যায়।

 

চিকিৎসা

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় রোগীকে পারমিথ্রিন, প্রোটামিটেন, সালফার ক্রিম দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মুখে খাওয়ার কিছু ওষুধ দেওয়া হয়।

আমাদের দেশে স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি পারমিথ্রিনি ক্রিম ব্যবহার করা হয়। রোগীর বয়স অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পারমিথ্রিন ক্রিম গলা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে শরীরের সব জায়গায় লাগাতে হবে। এটি ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে হবে। ৭ দিন পর একইভাবে পুনরায় পারমিথ্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।এ ছাড়া স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় প্রোটামিটেন এবং সালফার ক্রিম টানা ৫ দিন ব্যবহার করতে বলা হয়।

ক্রিম কাজে না দিলে প্রয়োজনে আইভারমেকটিন নামক মুখে খাওয়ার ওষুধ সপ্তাহে একটা করে চার সপ্তাহ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না।

এর পাশাপাশি রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে, ব্যবহৃত সবকিছু গরম পানিতে ফুটিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে, যাতে পরজীবীমুক্ত হয়। পরার আগে অবশ্যই পোশাক আয়রন করে নিতে হবে।

প্রতিরোধ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া যাতে না হয় সেজন্য সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। স্ক্যাবিস সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। কারো স্ক্যাবিস হলে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে।

এ ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সতর্কতা মেনে চলা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Exit mobile version