শারদীয় দুর্গোৎসব : মহাসপ্তমীতে মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড়

অনলাইন ডেস্ক :

 

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন মহাষ্টমী আগামীকাল শুক্রবার। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন মা দুর্গার অন্য কোনো নামে কুমারীর নামকরণ করা হবে।

 

এ বিষয়ে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে এবারের পূজার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বামী হরিপ্রেমানন্দ (স্বপন মহারাজ) জানান, কোনো ছোট্ট শিশুকন্যাকে ‘কুমারী মা’-এর আসনে বসানোর পরপরই সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে রামকৃষ্ণ মিশনে শুরু হবে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ১১টায় কুমারী পূজা ও বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে সন্ধিপূজা আরম্ভ হয়ে সন্ধ্যে ৭টা ৪১ মিনিটে শেষ হবে। মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত হবে।

 

এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মা’-এর পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হবে পুষ্পমাল্য। পূজার শেষে প্রধান পূজারি দেবীর আরতি নিবেদন করে দেবীকে প্রণাম করবেন। পূজার মন্ত্র পাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে ৪০ মিনিট পর শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন।

১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে ৯ জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এ ছাড়া নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন, আচার-অনুষ্ঠান করতে পারেন। 

এদিকে দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী উদযাপিত হয়েছে। নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্য দিয়ে মহাশক্তি আনন্দময়ীর পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ষোলোটি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সেই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্থানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে দেবীর পূজা করেন ভক্তরা। সকালে পূজা শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করে। আগামীকাল ভিড় আরো বাড়বে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এ বছর ঢাকায় ২৫২টিসহ  সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে।

 

সপ্তমীতে সকালে মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ভক্তরা প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রে সুর মিলিয়ে করছেন দুর্গা মায়ের বন্দনা। কেউ কেউ এসেছেন শুধু দেবী দর্শনে। পূজা শেষে বিতরণ করা হয়েছে মহাপ্রসাদ। এ সময় দীর্ঘ লাইনে প্রসাদ নিতে দেখা গেছে ভক্তদের। রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত রায় পরিবারসহ এসেছিলেন কলাবাগান পূজা মণ্ডপে। প্রার্থনা শেষে তিনি বলেন, ‘ভক্তদের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে মা প্রতিবছর আসেন। আমাদের মধ্যে অনাবিল সুখ-সমৃদ্ধি বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নেন। তাই মায়ের কাছে সুখ-শান্তি সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেন সবাই পরিবারসহ নিরাপদে থাকেন, দেশে শান্তি বজায় থাকুক।’ 

 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ : এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম, এটা আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক জানান, দুর্গাপূজা উদযাপনকালীন সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো রকম বিঘ্ন ঘটলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭৬৬৮৪৩৮০৯ এই মোবাইল নম্বরে অবহিত করা যাবে। এ ছাড়া সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে ১৪ তলায় ১৪২৪ নম্বর কক্ষেও সরাসরি তথ্য দেওয়া যাবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিবকে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *