শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী আজ সোমবার। সকাল ৮টায় সকল মন্দিরে নব পত্রিকা স্থাপন ও সপ্তমী বিহীত পূজা সম্পাদন হবে। সন্ধ্যায় ঢাকের তালে তালে আরতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার ছিল ষষ্ঠী পূজা। নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি ঠাকুরানী মন্দিরে সকালে ভক্তবৃন্দকে অঞ্জলি প্রদান করতে দেখা যায়। সন্ধ্যায় সকল মন্দিরে দর্শকদের সমাগম ঘটে। 

 

সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গাকে পূজিত করা হবে। এ ছাড়া চক্ষুদানের পর ভক্তরা আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে দেবীকে পূজা করবেন। সকাল ৭টা ২৯ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা।আগামী বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমনের সময়ই দুর্গোৎসব।রাম শরৎকালে দেবীকে আহবান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকালবোধন।

 

মহাষষ্ঠীর বিষয়ে রাজধানীর রমনা কালীমন্দিরের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী জানান, সংকল্প ও আরম্ভ—এ দুই মিলিয়ে হয় ‘কল্পারম্ভ’। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সব নিয়ম মেনেই তাঁর পূজার্চনা করা হয়। এ সময় সারা বিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করা হয়।তিনি বলেন, ‘স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে তাঁর পিতৃগৃহে পদার্পণ করলেন দেবী। এ সফরে তাঁর সঙ্গে আছেন চার সন্তান গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতী এবং কার্তিকের কলাবউ। ষষ্ঠীতে এই সময়টায় দেবী বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন। বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও সকাল ৭টায় ষষ্ঠী পূজা শুরু এবং সকাল ৯টার দিকে শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।সরেজমিনে গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোর থেকেই পূজার আয়োজনের ব্যস্ততা দেখা যায়। দেবীর আরাধনায় ভক্তরা ভিড় করেন সেখানে। দুর্গাপূজা ঘিরে এরই মধ্যে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

আজ মহাসপ্তমীআজ সোমবার মহাসপ্তমী পূজা। এদিন সকালে নবপত্রিকা স্থাপন করা হবে। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ৯টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান—এই ৯টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’। নবপত্রিকার ৯টি উদ্ভিদ প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গার ৯টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়।  নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গা প্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপাচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *