

অনলাইন ডেস্ক :
আজ বিশ্ব ডিম দিবস। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য‘শক্তি ও পুষ্টিতে ভরপুর ডিম’।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। দেশের পোল্ট্রি খাতের প্রধান সংগঠন বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা যৌথভাবে আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, একজন মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বছরে অন্তত ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশে মাথাপিছু ডিমের সহজলভ্যতা ১৩৭টি।অধিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে মাথাপিছু ডিমের ভোগ ১৬৫টি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২০৮টিতে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আইইসি কনফারেন্সে প্রথম বিশ্ব ডিম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে দিবসটি পালন করা হচ্ছে পুষ্টি সচেতনতা বাড়াতে এবং ডিমের গুরুত্ব তুলে ধরতে।
দেশে বছরে ডিমের চাহিদা যেখানে জনপ্রতি ১০৪টি, সেখানে উৎপাদন হয় ১৩৭টি। সরকারের দেওয়া এই পরিসংখ্যান দেখে সন্তুষ্ট হলেও দামে তার প্রতিফলন পান না ভোক্তারা। তাদের দাবি, দিমের দাম তুলনামূলক বেশি। কিন্তু এর কারণ কী?
সহজলভ্য আমিষের উৎস হিসেবে ডিমের কদর সবসময়ই থাকে। ভোক্তারা বলছেন, বাজারে শাক-সবজি, মাছ-মাংসের দাম বেড়ে গেলে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ মানুষ তখন খরচ কমাতে ডিমের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এক ডিম বিক্রেতা বলেন, এক কেজি সবজি কিনতে ৫০-১০০ টাকা খরচ হয়, কিন্তু এক হালি ডিম ৪০-৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এতে দুই জনের পরিবারও একদিন সহজে চলে যেতে পারে। তাই সবজির দাম বাড়লে ডিমের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ডিম উৎপাদন হয়; তাতে চাহিদা মেটানোর পরও অতিরিক্ত থাকার কথা। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখের বেশি ডিম প্রতিদিন বাজারে আসছে। একজন মানুষের জন্য সপ্তাহে দুটি ডিমকে ন্যূনতম চাহিদা হিসেবে ধরে বছরে ১০৪টি ডিম প্রয়োজন বলে অনুমান করা হয়েছিল। তবে এখন প্রায় ১৩৭-১৩৮টি ডিম বাজারে সরবরাহ করতে পারছি। উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। চাহিদা-জোগান সমীকরণে উদ্বৃত্ত হিসাব থাকার পরও অনেক ভোক্তার কাছেই পণ্যটির দাম বেশি বলে মনে হয়। ভোক্তারা বলেন, ডিম মানুষের নিত্যদিন প্রয়োজন হলেও হঠাৎ করে মাঝেমধ্যে দাম বেড়ে যায়; যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।
কম দামে ডিম খেতে চাওয়া ভোক্তার প্রত্যাশা পূরণের পথও দেখিয়ে দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তাদের যুক্তি, বিপণন কাঠামোতে মধ্যস্বত্বভোগীদের ঠেকাতে পারলেই কমবে দাম। কৃষি অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলাম খান বলেন, সবজির চেয়ে ডিমের সিন্ডিকেট বেশি ভয়াবহ, যা একটি বিশেষ শ্রেণি নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার পদক্ষেপ নিলে ডিমের বাজারে সংকট হওয়ার কথা না। কারণ ডিম উৎপাদন হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে এবং কৃষক পর্যায়ে, কিন্তু দেশে ডিমের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা নেই। একদিকে, উৎপাদন খরচ মিটিয়ে উৎপাদককে টিকিয়ে রাখা অন্যদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, জনগণকে কীভাবে আরও সুলভ মূল্যে ডিম সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। বর্তমানে সপ্তাহে জনপ্রতি দুইটি করে ডিম ধরে যে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামীতে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন সাদা ডিমের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম এমন একটি খাবার যাতে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই রয়েছে। সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী এই খাদ্যটি শিশু থেকে বৃদ্ধ-সব বয়সের মানুষের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বব্যাপী ডিমের মানোন্নয়ন ও জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে। তাদের উদ্যোগেই ১৯৯৬ সাল থেকে অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস।














