আজ মহা ষষ্ঠী, শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

ঢাকে পড়েছে কাঠি। বেজে উঠেছে শঙ্খ। ঘণ্টা আর কাঁসর ঝনঝন শব্দ। উলুধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ। উৎসবের সাজে মণ্ডপে মণ্ডপে নেমেছে ভক্তদের ঢল। ধূপ-আগরবাতির গন্ধ মোহিত করে তুলেছে আঙিনা। বর্ণিল সাজসজ্জা, হইচই আর মহা ধুমধামের যেন শেষ নেই। সকালেই ষষ্ঠী পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

 

শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব, শারদীয় দুর্গোৎসব। বছরব্যাপী বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শারদীয় দুর্গোৎসব জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আজ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলতলায় দেবীর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় সেই দুর্গোৎসব। এখন মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে ষষ্ঠী পূজা, সঙ্গে ঢাকের বাদ্য ও শঙ্খধ্বনি।

 

আজ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মণ্ডপে মণ্ডপে বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়েছে। ধূপ-ধুনচি, পঞ্চপ্রদীপ আর ঢাকের বাদ্যির তালে আজ আসনে অধিষ্ঠিত হবেন দেবী দুর্গা। বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ মহাষষ্ঠী। পঞ্জিকার সূচি অনুযায়ী, আজ বেলা ১১টা ১১ মিনিট পর্যন্ত ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হবে।

 

সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, এ বছর জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। আর দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। 

 

আজ রবিবার মহাষষ্ঠী, আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা এবং বুধবার মহানবমী শেষে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। 

 

সাধারণত দেবী দুর্গার বোধন হয় ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। কিন্তু কিছু বছর যেমন এবার পঞ্জিকার নিয়মে দেখা যাচ্ছে ষষ্ঠী তিথি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বেশ রাত থেকে শুরু হচ্ছে বা পরের দিন বেশিক্ষণ নেই।তাই শাস্ত্র মতে যদি ষষ্ঠীর উপযুক্ত সন্ধিকাল না পাওয়া যায়, তবে পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায়ই বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস করতে হয়। অর্থাৎ এবার ষষ্ঠী তিথি পুরোপুরি সন্ধ্যায় মিলছে না। তাই নিয়ম মেনে পঞ্চমীর সন্ধ্যায় (শনিবার) দেবী দুর্গার বোধন করা হবে। তিথির কারণে এমনটা হচ্ছে।বোধন শেষে  রবিবার দুর্গা দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা।এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। আর দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। 
শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে ম-পে ম-পে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। 
পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসর এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসেবে এবার ১ হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে।
 
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *