কার্বোরেটর বেশি ভালো নাকি এফআই

মটো কর্নার :

 

কার্বোরেটর নাকি ফুয়েল ইনজেকশন (এফআই) ? মারামারি লেগেই আছে—কোনটা ভালো, কেন ভালো? কোনটা নিলে জিতব? লাভ বেশি কোনটাতে?

 

গল্প অনেক লম্বা, তাই ছোট করে বলি। 
কার্বোরেটর হলো ট্র্যাডিশনাল ফুয়েল সিস্টেম। এটাতে একটা মেকানিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে কম্বাশন চেম্বারে ফুয়েল এবং এয়ার মিক্সচার প্রবেশ করে।

 

অন্যদিকে, এফআই টেকনোলজি বেশ জটিল। একগাদা সেন্সর, যেমন: থ্রোটল পজিশন সেন্সর, অক্সিজেন সেন্সর, ইঞ্জিন টেম্পারেচার সেন্সরসহ নানা সেন্সর দিয়ে ডাটা কালেক্ট করে ইসিইউতে পাঠায়। ইসিউ সেই ডাটা ক্যালকুলেট করে ট্যাংক থেকে ফুয়েল পাম্পের মাধ্যমে ইনজেকটর দিয়ে প্রয়োজনীয় তেল স্প্রে করে ইঞ্জিনে ফুয়েল সাপ্লাই করে৷ 

 

এছাড়া, এফআই ইঞ্জিনের আরো কিছু ভালো দিক আছে, যেমন: ভালো কম্বাশনে হেল্প করে ফলে ইফিসিয়েন্সি বাড়ে এবং থ্রোটল রেসপন্সের ল্যাগ কমায়। 

 

তবে, এফআই কম্পোনেন্টগুলো যদি ভালো কোয়ালিটির না হয়, তাহলে দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। মেইনট্যানেন্সে যেমন খরচ করাবে, আবার এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পার্টস—ফুয়েল পাম্প, ইঞ্জেকটর ফ্রিকোয়েন্টলি নষ্ট হলে সার্ভিস খরচ দিয়ে নিঃস্ব হতে দেরি হবে না। আর রাস্তায় নষ্ট হলে ভোগান্তি চরমে উঠবে।

 

অন্যদিকে, কার্বোরেটরে তেমন কোনো মেইনট্যানেন্স খরচ নেই। ইচ্ছামতো টিউন করা যায়, পাল্টাতে হলেও দাম হাতের নাগালে। কার্বোরেটর নষ্ট হতেও সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না। 

 

কোল্ড স্টার্টের ক্ষেত্রে এফআই সিস্টেম বেটার পারফরম্যান্স দেয়। তবে, আমাদের দেশের ওয়েদার শীতকালে সর্বোচ্চ ঠান্ডা হলেও সেটা ১৫ ডিগ্রির নিচে নামে না। এই কড়া শীত বছরে ১৫ দিনের বেশি থাকেও না৷ তাই, কার্বোরেটর ইঞ্জিন হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোল্ড স্টার্টিং নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো বড় কারণ নেই৷ 

 

খাতা-কলমে এফআই ইঞ্জিন বেশি মাইলেজ দেওয়ার কথা। বিজ্ঞাপনেও এরকমটাই দেখানো হয়। কিন্তু, বাস্তবে বাংলাদেশের বাজারে বেশকিছু জনপ্রিয় কমিউটার সেগমেন্টের বাইকের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তুলনামূলক বেশি সিসির কার্বোরেটর ইঞ্জিনওয়ালা বাইক মাইলেজ দিচ্ছে ৫০-৫৫ কিলোমিটার, অন্যদিকে কম সিসির এফআই বাইক মাইলেজ দিচ্ছে ৪০-৪২ কিলোমিটার। 

তাই, চুলচেরা হিসেব করলে আমাদের দেশে এফআই’র চেয়ে কার্বোরেটর কেনাই বেশি প্র‍্যাকটিক্যাল।

 

কারণ, কার্বোরেটর ইঞ্জিনের বাইক একই সঙ্গে সাশ্রয়ী এবং হ্যাসেল ফ্রি। কার্বোরেটর ইঞ্জিনের বাইকের দামও তুলনামূলক কম। 

 

তবে, আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে যেসব এফআই বাইক বাজারে আসত, সেগুলোর কোয়ালিটি অনেক ভালো এবং নির্ভরযোগ্য ছিলো বলে অনেক বাইকারের থেকে ফিডব্যাক পাওয়া গেছে৷ 

ঘন ঘন ক্লিন করা বা মেইনট্যানেন্স করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বাজারে এভেইলেবল এফআই বাইকের প্রচুর সমস্যার কথা শোনা যায়, যেটা একেবারেই অস্বাভাবিক। 

মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানে বাজারে একই মডেলের বাইকের কার্বোরেটর এবং এফআই—এই দুটো ভ্যারিয়েন্টই এভেইলেবল থাকে। তাই, যেকোনো ব্র্যান্ডের বাইক কেনার আগে ইউজার ফিডব্যাক পর্যালোচনা করে নিজের চাহিদা, প্রয়োজন এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে আপনার জন্য কোন ভার্সনটা সবচেয়ে বেশি প্র‍্যাকটিক্যাল, সেটা বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *