

সজীব নন্দী (কুষ্টিয়া ) :
কুষ্টিয়া জেলায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। রবিবার (১৩ অক্টোবর) ২০২৪ সকাল থেকে সব পূজা মণ্ডপে ছিল বিষাদের সুর। বিজয় দশমীর দিনে বিসর্জনের মধ্যদিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা।পেছনে রেখে গেলেন ভক্তদের পাঁচ দিনের আনন্দ-উল্লাস আর বিজয়ার আনন্দ অশ্রু।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ রবিবার কুষ্টিয়ার ঘোড়ার ঘাটে (গড়াই নদী) দশমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাকে বিদায় জানিয়েছেন বিদায়ী সূর ও অশ্রুজলে। স্থানটিতে শহরের আড়ুয়াপাড়া হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দির, আমলাপাড়া, আড়ুয়াপাড়া, ঘোষপাড়া, থানাপাড়া, দেশওয়ালীপাড়া, মিলপাড়ার এলাকার মানুষ অংশ নেয়।মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় ছিল প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস। পাশাপাশি মন্ডপে মন্ডপে ছিল বিদায়ের সুর। শঙ্খনাদ আর উলুধ্বনিতে পূজা মন্ডপে চলছিলো দেবীর কাছে মঙ্গলকামনা ।
কুষ্টিয়া শহরের দূর্গাপূজার বিসর্জন হয় গড়াই নদীর তিনটি স্পটে এর মধ্যে ঘোড়াই ঘাট, আমলাপাড়া পুর্ণবাবুর ঘাট ও হরিপুর সেতুর নিচে।এখানে আগেই থেকেই কুষ্টিয়া পুলিশের ও ডিবির একটি টিম, র্যাব ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংলাবাহিনী অবস্থান নেয়। এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিলো বিশেষ সতর্কতায়। পুরো আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাস্তার মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছিলো পুলিশের কড়া নজরদারি।
বিকেল থেকে শুরু হয়ে আনুমান রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এখানে ৩০টির অধিক পূজা বিসর্জন কার্যক্রম হয়ে থাকে।
ঘোড়াই ঘাটে আগত কয়েকজন দর্শনার্থী জানালো, এবার পুজা উৎসব সীমিত হলেও আনন্দ হয়েছে বেশ। তবে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দেবী এবার ঘোড়াই চড়ে গেছেন কৈলাসে।
এ বছর ২ অক্টোবর,২০২৪ বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের সূচনার মাধ্যমে শুরু হয় দুর্গা উৎসব অর্থাৎ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গা উৎসব ২০২৪ নির্বিঘ্ন করতে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ প্রতিমা তৈরির দিন হতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করে গেছে।
কুষ্টিয়া জেলায় এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ছিল ২৩০ টি। এ বছর কুষ্টিয়া জেলার ২৩০ টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে যথাক্রমে সদর উপজেলায় ৭২টি, খোকসা উপজেলায় ৬২টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৫টি, মিরপুর উপজেলায় ২৬টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ৮টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ৭টি মন্দিরে অত্যন্ত উৎসব মুখরভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হয়।
জেলা পুলিশ কুষ্টিয়ার পক্ষ থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের দিনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মণ্ডপে ইউনিফর্মধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাছাড়াও কুষ্টিয়া জেলায় পুলিশের মোবাইল টিম, ৭ থানার জন্য ডিবি’র মোবাইল টিম, সাদা পোশাকি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও প্রতিদিন কুষ্টিয়া জেলার সকল থানার অফিসার ইনচার্জ বৃন্দ, সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারবৃন্দ কর্তৃক বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ভিজিট করার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, উৎসবের শুরু থেকে প্রতিটি পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিলো। উৎসব চলাকালীন জেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পূজা মন্দিরে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও আনসার সদস্য মোতায়েন ছিলো।
এদিকে কুষ্টিয়ার গড়াই নদী, পদ্মা নদী ও হিসনা নদীসহ বিভিন্ন স্থানে ২৩০টি মণ্ডপের দুর্গাপূজার বিসর্জন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
ভক্তরা অশ্রুসজল নয়নে মাকে বিদায় জানায়। দেবী দুর্গার বিসর্জনে ভক্ত ও দর্শনার্থীতে পূর্ণ হয়ে যায় পদ্মা, গড়াই নদীর পাড়। পূজা বিসর্জনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মত।
কুষ্টিয়া জেলায় সর্বশেষ ১৩ অক্টোবর, বিজয়া দশমী’র অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবং প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দর ও উৎসব মুখরভাবে সমাপ্ত হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা।









