শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাষ্টমী

ডিপি ডেস্ক :

 

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন মহাষ্টমী আজ মঙ্গলবার। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারীপূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন মা দুর্গার অপর কোনো নামে কুমারীর নামকরণ করা হবে।

 

দেবীশক্তির বন্দনা ও অসুরবধে অশুভ খণ্ডনের প্রত্যয়ে আজ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী। গতকাল নবপত্রিকাপ্রবেশ, সপ্তমী পূজা এবং সন্ধ্যারতির মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমী পালিত হয়েছে। দুর্গা দেবীর নবপত্রিকাপ্রবেশ ও স্থাপন এবং পূজার মধ্য দিয়ে সপ্তমী শেষ হয়। এরপর কয়েক দফায় অঞ্জলি দেন উপবাসরত ভক্তরা।

 

পঞ্জিকামতে এ আচারের মধ্য দিয়ে সনাতনধর্মাবলম্বীরা কৃষি, খনিজ, বনজ, জলজ, প্রাণিজ ও ভূমিসম্পদ রক্ষার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। সপ্তমীলগ্নে নবপত্রিকাপ্রবেশ একটি ‘প্রতীকী’ পূজা। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। এ পূজায় কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এ নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলা গাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে এক জোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড়ে সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তার কপালে সিঁদুর দিয়ে দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’। নবপত্রিকাপ্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গা প্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।

 

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গতকাল সপ্তমী পূজার মধ্য দিয়ে মূলত পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উপবাস থেকে অঞ্জলি দিয়ে দেবীর পায়ে সমর্পণ করা হয় মনের সব পাপ, তাপ, শোক। বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজাম পে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আরতির ধুম। ধুপতি হাতে ধুনচি নাচে মেতে ওঠেন সবাই। আগমনি গান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট হয়ে ওঠে পূজাম প। আজ মহাষ্টমী। কুমারীপূজা, সন্ধিপূজা এবং অষ্টমী পূজার মধ্য দিয়ে পালিত হবে মহাষ্টমী। এদিকে রামকৃষ্ণ মিশন দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন কুমারীপূজা করে থাকে, যেখানে কুমারী বালিকাদের দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

 

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে আরতি ও সংগীত প্রতিযোগিতা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

কুমারীপূজা মানে স্বয়ং মাকে পূজা করা। তিনি জানান, কোনো ছোট্ট শিশুকন্যাকে কুমারী মা-এর আসনে বসানোর পরপরই সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে রামকৃষ্ণ মিশনে শুরু হবে কুমারীপূজার আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে কুমারীপূজা শেষ হবে। বিকেল ৫টা ৩৭টা সন্ধিপূজা শেষ হবে।মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
সপ্তমীতে সকালে মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ভক্তরা প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরহিতের সঙ্গে মন্ত্রে সুর মিলিয়ে করছেন দুর্গা মায়ের বন্দনা। কেউ কেউ এসেছেন শুধু দেবী দর্শনে। পূজা শেষে বিতরণ করা হয়েছে মহাপ্রসাদ।

 

বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যেই মন্দির পরিদর্শন করেছেন। আগামীকাল বুধবার মহানবমী পূজা এবং বৃহস্পতিবার দশমী পূজা শেষে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় শ্রীশ্রীদুর্গা পূজা।

 

পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্বেগ :দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রতিমায় অসুরকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ ঘটনা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *