শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহানবমী

ডিপি ডেস্ক :

 

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী পূজা আজ বুধবার। নবমীর সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচন্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হবে, অর্থাৎ যিনি চন্ড ও মুণ্ডের বিনাশিনী। পূজার এই মুহূর্তটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। দেবীদুর্গার আশির্বাদ নিয়ে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরাম চন্দ্র এই মুহূর্তেই লঙ্কার রাজা রাক্ষস রাবণকে বধ করেছিলেন। সন্ধ্যায় প্রত্যেক মন্দিরে সন্ধ্যায় উলুর ধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি, ঢাকের তালে তালে আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

 

শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ মহাষ্টমীতে ‘কুমারীপূজা’। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠে এই পূজার আয়োজন করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে মহাষ্টমী পূজা শুরু হয়। আর কুমারীপূজা শুরু হয় সকাল ১১টায়, যা দুপুর ১২টায় শেষ হয়।দেশের বিভিন্ন মণ্ডপে একই আয়োজন ছিল। এবার কুমারীপূজায় ছিল ভক্তের উপচে পড়া ভিড়। আজ বুধবার মহানবমী পূজা।পূজার আয়োজকরা জানান, মহাষ্টমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কুমারীপূজা।

সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী মেয়েকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। এবার কুমারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে সাত বছর বয়সের লাবণ্য চট্টোপাধ্যায়। শাস্ত্র মতে, কুমারী দেবীর নাম রাখা হয়েছে মালিনী। কুমারী দেবীর বাবার নাম বিজয় চট্টোপাধ্যায়।
তাকে ভোরে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তারপর সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা এবং হাতে ফুল দেওয়া হয়। পরে তাকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে (১৬ উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিক শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি ও দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, দেবীদুর্গাকে সম্মান জানাতেই অষ্টমীতে আয়োজন করা হয় কুমারীপূজার।কুমারীপূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। এর মাধ্যমে নারী জাতির প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল হবে। 

 

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এদিন ছিল হাজার অনুরাগীর ঢল। পূজামণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, কাঁসরঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো প্রাঙ্গণ। রামকৃষ্ণ মন্দির ছাড়াও দেশের বিভিন্ন মণ্ডপ-মন্দিরে কুমারীপূজার আয়োজন ছিল। নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে দেবীরূপে মানবীর মঞ্চে অধিষ্ঠিত হয় সাত বছর বয়সী রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য। কুমারী বেশে সেই মহামায়াকেই মাতৃজ্ঞানে পূজা করে শত শত ভক্ত। সকালে রাজশ্রীকে পূজার মণ্ডপে তুলে এনে ষোড়শ উপাচারে পূজা করা হয়। মহাষ্টমী পূজায় রামকৃষ্ণ মিশনের পাশাপাশি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, শাঁখারীবাজার পানিটোলা মন্দিরসহ বিভিন্ন মণ্ডপে সকাল থেকে দেবী দর্শনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। 

 

আজ মহানবমী পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ বুধবার মহানবমী পূজা। রাত ৩টা ৫ মিনিটে মহানবমী শুরু এবং সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ হবে। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ।

 

আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। রাজধানীতে ২৫৯টি মণ্ডপ রয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ-আনসারসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।  বৃহস্পতিবার বিজয় দশমী পূজার পর মহিলাদের সিঁদুর খেলা এবং সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *