অনলাইন ডেস্ক: ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার একমাত্র ড্রাগ আদালত ভেজাল ও নকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে এ সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর গত ১৮ বছরে ওই আদালতে ১৯৮২ সালের ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ৭৩৯টি। তবে শুরুর দিকে মামলার সংখ্যা বেশি থাকলেও সম্প্রতি মামলার সংখ্যা কমে গেছে।এদিকে তদন্তে দুর্বলতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিরা বেকসুর খালাস ও লঘুদ- পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী, কেবল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ড্রাগ আদালতে মামলা করতে পারবে এবং অন্য সংস্থা মামলা করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির অনুমতির প্রয়োজন হওয়ার বিধান থাকায় মামলার সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ভবনের তৃতীয় তলায় ড্রাগ আদালত তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতই একই সঙ্গে ড্রাগ আদালত হিসেবে কাজ করছেন। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক ওই আদালতে বিচারকাজ পরিচালনা করেন।ড্রাগ আদালতের মামলার রেজিস্ট্রার সূত্রে দেখা যায়, ১৮ বছরে এ আদালতে আসা ৭৩৯ মামলার মধ্যে ৫৩৬টি মামলার আসামিরা দ-িত হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসামিদের অর্থদ- এবং অনাদায়ে কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু আসামিরা অর্থদ- দিয়েই রেহাই পেয়েছেন। বাকি ৪৮ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন না করেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাক্ষী না আসায় ৮১ মামলার বিচারকাজ স্থগিত হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় ৩৫ মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছে। বর্তমানে ওই আদালতে ৩৪ মামলা চলমান রয়েছে। বিচারক সৈয়দ কামলার হোসেন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।ড্রাগ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রিড ফার্মার বিষাক্ত প্যারাসিটামল সেবন করে ২০০৯ সালে সারাদেশে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলা। ২০১৬ সালে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী শিউলি রহমানসহ ৫ জনকে বেকসুর খালাস দেন ওই আদালত। তদন্তকারী কর্মকর্তা সঠিকভাবে তদন্ত না করায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বিচারক।তবে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. হেলেন পাশাসহ ৩ জনের ১০ বছর করে কারাদ-ের রায় দিয়েছিলেন আদালত। ২০১৪ সালের ২২ জুলাই একই আদালত এ রায় দিয়েছিলেন।এ ছাড়া ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট বিসিআই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ভেজাল প্যারাসিটামল উৎপাদনের অভিযোগের দুই মামলায় কোম্পানিটির ৬ কর্মকর্তার প্রত্যেক মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আদালত।১৯৮২ সালের ড্রাগ অধ্যাদেশ আইনে ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদ- ও দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং নিম্নমানের ওষুধ উপাদনের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অননুমোদিত ড্রাগ আমদানির জন্য ৩ বছর পর্যন্ত কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।অন্যদিকে উচ্চমূল্যে ওষুধ বিক্রির জন্য ২ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- ও সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধ চুরির জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ড্রাগের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান আইনে আছে।অভিযোগ রয়েছে, ঔষধ প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে অভিযুক্তরা অনেক ক্ষেত্রেই পার পাচ্ছেন। ফলে আইনটি সংশোধন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।জানা গেছে, ১৯৮২-৯২ সাল পর্যন্ত ভেজাল ওষুধ সেবনে কিডনি অকেজো হয়ে কয়েক হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। তৎকালীন আইপিজিএমআর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ১৯৮৬ সালে ছয় শতাধিক শিশুর কিডনি ডায়ালাইসিস করেন। এসব শিশুর বেশিরভাগই মারা যায়। এ ছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ভেজাল ওষুধ সেবনের ফলে প্রায় পাঁচশ শিশুর মৃত্যু হয়।ড্রাগ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ নাদিম জানান, ওই আদালতে যেসব মামলা হয় বা আসে, তিনি শুধু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করেন। প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক গোলাম কিবরীয়া জানান, আদালতে মামলা কিছুটা কম হলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা দিচ্ছে। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনেও মামলা হচ্ছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকছে।তিনি আরও বলেন, ঢাকা ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ ড্রাগ আদালত রয়েছে। যেখানে মামলা হচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় একজন করে ড্রাগ সুপারভাইজার প্রত্যেক মাসে সন্দেহজনক ১০টি করে ওষুধের নমুনা পাঠাচ্ছেন। পরীক্ষায় ভেজাল বা নিম্নমান ধরা পড়লে মামলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির তৎপরতার জন্যই গত ১০ বছরে ভেজাল ওষুধে মৃত্যু হয়েছেÑ এমন সংবাদ দেখা যায় না বলে দাবি করেন তিনি।
Posted in বাংলাদেশ
মামলা ৭৩৯ বিচারাধীন ৩৪ ওষুধ নিয়ন্ত্রণে
February 8, 2019