মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ১০ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ শুরু হচ্ছে আজ

অনলাইন ডেস্ক :

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী—একসঙ্গে দুটি ঐতিহাসিক উদযাপন। ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে আজ বুধবার শুরু হচ্ছে ১০ দিনের বর্ণাঢ্য আয়োজন। বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

 

বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন এই অঞ্চল ও বিশ্বের নেতাও। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর গড়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে আসছেন বিদেশি নেতারাও। আজ সকালেই ঢাকায় আসছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ; তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

 

এরপর একে একে ঢাকায় আসছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোতে শেরিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কভিড পরিস্থিতির কারণে অনেক নেতা সশরীরে না এলেও ভিডিও বার্তা পাঠাচ্ছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভিডিও বার্তাও আজ প্রচার করার কথা রয়েছে। আগামী কয়েক দিনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, ইউনেসকোর মহাপরিচালক, পোপ, ওআইসি মহাসচিবসহ আরো অনেক নেতা ভিডিও বার্তা দেবেন। উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা ভবনে আলোকসজ্জা হবে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে।

 

১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব চিরন্তন’-এ প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও ভিজ্যুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের থিম ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’। শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং এর পরপরই শত শিশুশিল্পীর সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হবে। স্বাগত বক্তব্য দেবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

 

অনুষ্ঠানস্থল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডকে এরই মধ্যে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা দিতে তুলে ধরা হচ্ছে নানা শৈল্পিকতা। অনুষ্ঠানস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার, পদ্মা সেতু, গ্রামীণ জীবন যাপনের আবহ, জাতীয় মাছ ইলিশসহ নানা দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা।

 

বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হবে প্রতিটি পরিবেশনায়। গান, নাচ, অভিনয়সহ নানাভাবে তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন। বঙ্গবন্ধু একজন ত্যাগী ও সাহসী নেতা ছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে জন্মশতবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করছে সরকার। আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা ভার্চুয়ালি ও সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। চলমান করোনা মহামারি বিবেচনায় অতিথি আমন্ত্রণ সীমিত করা হয়েছে। প্রতিদিন ৫০০ করে অতিথিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাইকে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে হবে।

 

১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার থিমগুলো হলো ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’, ‘মহাকালের তর্জনী’, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।

 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের বিস্তর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে অনেক অনুষ্ঠানই আমরা করতে পারিনি। তবে নানা ধরনের প্রকাশনা, বঙ্গবন্ধু কুইজসহ বিভিন্ন আয়োজন আমরা বাস্তবায়ন করেছি। তবে আশার কথা, সরকার মুজিববর্ষ আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে আমাদের পরিকল্পনায় থাকা অনেক আয়োজনই বাস্তবায়ন করতে পারব।’

 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আবেগের একটি স্থল, সেই আবেগকে ধারণ করেই সব ধরনের কাজকর্ম পরিচালনা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলোর শুরুতে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পরবর্তী সময়ে সশরীরে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

অনুষ্ঠানে কী বার্তা দেবে বাংলাদেশ—এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দীর্ঘ জীবনসংগ্রাম পার করে ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাহসিকতায় আপসহীন নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেসব খুঁটিনাটি তথ্য তুলে ধরা হবে অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আত্মত্যাগের বিষয়টিও দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে, উন্নয়নের দিকে গেছে, দেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি অবস্থায় নেই। যাঁরা এমন (তলাবিহীন ঝুড়ি) মন্তব্য করেছিলেন, তাঁরাও বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।

 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী মহাকর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও মুজিববর্ষ পালনের নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ?শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল মুজিববর্ষের নানা আয়োজন। কিন্তু গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর আয়োজনে ছেদ পড়ে। নানা কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়। তবে এর মধ্যেও প্রকাশনায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়। এরই মধ্যে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষ বাড়ানো হয়েছে। এতে অনেক অসমাপ্ত আয়োজন সমাপ্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *