আজ শুভ মহালয়া, দেবীপক্ষের সূচনা

অনলাইন ডেস্ক :

 

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, মহালয়া আজ রবিবার। এ দিন থেকে দেবী পক্ষের শুরু। এই পুণ্যলগ্নে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে পা রাখবেন। মহালয়ার পর থেকে দিন গণনার মধ্যে দিয়ে ষষ্ঠীতে দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

 

হিন্দু শাস্ত্রমতে, চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া নামে পরিচিত। মহালয়ার আক্ষরিক অর্থ ‘আনন্দ নিকেতন’।

 

শুভ মহালয়া আজ, পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। একই সঙ্গে শারদীয় দূর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নেরও শুরু আজ থেকে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দূর্গা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে। বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। তখন দূর্গা দেবীর মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। আর প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।

 

হিমালয়ের কৈলাশ থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর দূর্গা দেবী আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। প্রতিবছরের শরৎকালে দেবী দূর্গার এই আগমন হয় নিজ ভূমিতে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, এবার দূর্গা দেবী আসছেন গজে, যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় যার শস্য বৃদ্ধি ও জল বৃদ্ধি।

 

হিন্দু শাস্ত্রমতে, দেবী দূর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়া দূর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজারীরা দূর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পাবেন। হিন্দু ধর্মমতে, মহালয়ার দিনে দেব-দেবীকুল দূর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার দুটি পর্ব রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয় আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবী পক্ষের। আজ মহালয়া দিয়ে আরম্ভ হচ্ছে সেই দেবীপক্ষ।

এদিন গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। আজ ভোর থেকে সারাদেশে স্থায়ী অস্থায়ী দূর্গা মণ্ডপগুলোতে চণ্ডীপাঠ ও পূজা অর্চনার মাধ্যমে দূর্গা দেবীকে আহ্বান করা হবে। এভাবেই আজ মর্ত্যলোকে, আবাহন ঘটবে দেবী দূর্গার। ভক্তদের কন্ঠে উচ্চারিত হবে, যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্ত্যৈ নমস্ত্যৈ নমস্ত্যৈ নমঃ নমঃ।

 

হিন্দু শাস্ত্রমতে, চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া নামে পরিচিত। মহালয়ার আক্ষরিক অর্থ ‘আনন্দ নিকেতন’।

 

পুরাণমতে, অসুর ও অশুভ শক্তির কাছে দেবতারা যখন পরাভূত হয়ে স্বর্গলোকচ্যুত হন তখন চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির প্রবল প্রতাপ। সেই অশুভ শক্তি কে পরাভূত করতে একত্রিত হন দেবতারা। এ সময় তাদের তেজরশ্মি থেকে আভির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহালয়ায় থাকে ঘোর অমাবস্যা। দুর্গা দেবীর তেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা পায়।

 

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার ১৪ আশ্বি^ন (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীতে দেবীর আবাহন ও বোধনের মাধ্যমে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ১৫ আশি^ন (২ অক্টোবর) মহাসপ্তমী, ১৬ আশি^ন (৩ অক্টোবর) মহাষ্টমী, ১৭ আশ্বিন (৪ অক্টোবর) মহানবমী এবং ১৮ আশ্বিন (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।

 

মহালয়ায় আজ ভোর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজামণ্ডপগুলোতে চন্ডীপাঠ ও অর্চনার মাধ্যমে দুর্গা দেবীকে আহ্বান করা হবে। এছাড়া প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করে তর্পণ করা হবে। এ উপলক্ষে জাতীয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, ঘট স্থাপন, চন্ডীপাঠ, পূজা, আরাধনা ও ধর্মীয় সংগীত অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ।

 

ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ  বলেন, মহালয়ার পাঁচ দিন পর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশা করি নির্বিঘ্নে পূজা ও অনুষ্ঠান হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *