ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ঈদুল আজহা আজ

অনলাইন ডেস্ক :

 

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। ত্যাগের মহিমায় সারা বিশ্বের মুসলমানের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে পশু কিনে কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছেন অনেকে।

 

আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।

 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। আজহা অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হজরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অতুলনীয়।

 

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

 

প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

তিনি তার বাণীতে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’

 

শেখ হাসিনা আরও বলেন, হজরত ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

 

গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

 

এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

 

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত হবে। সকাল ৯টায় হবে এ ঈদ জামাত।

 

প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজের পাঁচটি জামাত হবে। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো হবে।

 

প্রথম জামাত সকাল ৭টায় হবে। ইমাম হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।

 

দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ ক্বারী মো. আতাউর রহমান।

 

তৃতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।

 

চতুর্থ জামাত হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।

 

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।

 

এসব জামাতে যদি কোনো ইমাম উপস্থিত না থাকেন, তাহলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা জাকির হোসেন।

 

উল্লেখ্য, আবহাওয়া প্রতিকূল হলে জাতীয় ঈদগাহের ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম সকাল ৮টায় হবে।

 

সারা দেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

 

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

 

কোরবানি পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দিয়ে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়, সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু, পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহীমের (আ.) ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে।

 

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই মসজিদ বা ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে, এবার করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দার সময়ে ঈদুল আজহা হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

 

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান আছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।

 

মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবেন।

 

আবহাওয়া প্রতিকূল হলে জাতীয় ঈদগাহের ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।

 

সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *