ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ গ্রেপ্তার ৪

অনলাইন ডেস্ক :

 

সরকারি বিভিন্ন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি প্রতারকচক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় প্রতারণায় ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোনসেট, বেশ কিছু ভুয়া নিয়োগপত্র, চেক ও স্ট্যাম্প।

 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. ফরিদুল ইসলাম (২৯), মো. নাসির চৌধুরী (৪৫), মো. নাসিম মাহমুদ (৪৩) ও জুয়েল রানা (৪৫)।

চক্রের হোতা ফরিদুল, জুয়েল মাঠ পর্যায়ের কর্মী, নাসিম মাঠ পর্যায়ের সাব-এজেন্ট ও নাসির ঢাকায় সাব-এজেন্ট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা দুই-তিন বছর ধরে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। 

বৃহস্পতিবার ঢাকার মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

 

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তর, পররাষ্ট্র অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিআরটিসি, বিএডিসি, এলজিইডি, সচিবালয়, বিভিন্ন ব্যাংক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন, মেট্রো রেল, বিমানবন্দর, তিতাস গ্যাস ও ওয়াসার আউটসোর্সিং এবং সেনাবাহিনীর সিভিল পদে চাকরির বিজ্ঞাপন পত্রিকায় আসার পর প্রতারকচক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠত।

চক্রটি এসবে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে চাকরি দিতে পারেনি। 

ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি গত কয়েক বছরে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনুসন্ধানে এই চক্রের বিভিন্ন ধাপ লক্ষ করা যায়। কোনো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেই চক্রের মাঠকর্মীরা চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে গিয়ে তা দেখাতেন এবং বলতেন টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো লোক তাঁদের হাতে আছে।

 

চাকরিপ্রার্থীরা প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁদের কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক, ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ও সিভি সংগ্রহ করার পাশাপাশি অগ্রিম হিসেবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নিতেন মাঠকর্মীরা। 

ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, মাঠকর্মী তাঁর কমিশনের নির্দিষ্ট টাকা রেখে বাকি টাকা ও সিভি মাঠ পর্যায়ের সাব-এজেন্টের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। সাব-এজেন্ট এই টাকা ও সিভি রেখে সব চাকরিপ্রার্থীকে নির্দিষ্ট একটি দিনে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) কথা বলে ঢাকার এজেন্টের কাছে পাঠাতেন। পরে ঢাকার এজেন্ট আবাসিক হোটেলের কক্ষে বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশপাশের কোনো চায়ের দোকানে চাকরিপ্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিতেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে প্রার্থীর কাছ থেকে এদিন চুক্তির ৫০ শতাংশ টাকা নেওয়া হতো।

 

এরপর চক্রের আরেক সদস্য চুক্তির বাকি টাকা নিয়ে প্রার্থীকে চাকরিতে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি ভুয়া আইডি কার্ড দিতেন। পরবর্তী সময়ে চাকরিপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারতেন, ওই নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড ভুয়া। 

ডিবিপ্রধান বলেন, প্রতারকচক্রটি প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিত। চক্রটি এক ব্যক্তিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমএলএসএস পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে একটি নিয়োগপত্র দেয়। তিন মাস পর তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য গিয়ে জানতে পারেন, নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এরপর অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁদের ব্যবহৃত নম্বরগুলো বন্ধ পান। এ ঘটনায় তিনি চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

 

চাকরির বিষয়ে ডিবির পরামর্শ 
যেকোনো চাকরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনৈতিক উপায়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। অনেক প্রতারকচক্র ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে প্রতারণা করে থাকে। তাই বিজ্ঞপ্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে শুধু সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক নিয়োগ কার্যক্রম হয়ে থাকে। সুতরাং নিয়ম মেনেই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। আর কখনো প্রতারিত হলে নিকটস্থ থানা-পুলিশকে জানাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *