পাঁচ বছর ব্যাংকে থাকবেন না দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকরা

অনলাইন ডেস্ক :

 

দেশে প্রথমথমবারের মতো ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালায় একীভূতকরণের ফলে কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।

 

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী চাকরি হারাতে যাচ্ছেন একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না দুর্বল ব্যাংকের পরিচালক।

 

এদিকে এমডি চাকরি হারালেও চাকরি থেকে নূন্যতম তিন বছর পূর্তির আগে ছাটাই করা যাবে না ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। 

একীভূতকরণে বড় সুবিধা মিলবে। ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের সুনির্দিষ্ট অংশ ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের পুঞ্জিভূত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নির্দিষ্ট মেয়াদে আয় থেকে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধা, দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনার মাধ্যমে নগদ সহায়তা ও মূলধন বাড়াতে শেয়ার ও বন্ড ইস্যুতে সহায়তা পাবে ব্যাংকগুলো।

 গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে। এই নীতিমালা সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 
নতুন নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধান অনুসারে-এক বা একাধিক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারবে। কোনো ব্যাংক-কোম্পানি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা ফাইন্যান্স কোম্পানির সঙ্গে একীভূতকরণ করতে পারবে।

চাইলে কোন ব্যাংক সমঝোতার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানির নির্দিষ্ট শাখা অধিগ্রহণ এবং দুইটি একই ধরণের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শাখার অদল-বদল, ব্যবসা স্থানান্তর এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে। বিদেশি ব্যাংকের শাখার একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মূল ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। 

এই একীভূতকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অধিকতর সবল ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একইসঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা দিতে পারে।

 

যদি কোনো দুর্বল বা সংকটাপন্ন ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়, হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের মূলধন, তারল্য, খেলাপি ঋণ আর্থিক সূচক প্রভাবিত হতে পারে।এ ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকারী ব্যাংককে নীতি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

ব্যাংকের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে যেসব নীতি সহায়তা দেবে – ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও), এসএলআর (স্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও), এলসিআর (লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও), এনএসএফআর (নেট স্ট্যাবল ফান্ডিং রেশিও) সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অংশ ছাড় দেয়া হবে। হস্তান্তরকারী ব্যাংকের আয়ের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের পুঞ্জীভূত ক্ষতি সামঞ্জস্য করতে হস্তান্তরকারী ব্যাংকের এ ক্ষতিকে গুডউইল-এ রূপান্তর করে তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তর-গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় বা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে। বিদ্যমান সুবিধার আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে। ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনার মাধ্যমে নগদ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুতে সহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরে সরকার বিশেষ নীতি সহায়তা দিতে পারে।

 

ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শৃঙ্খল এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী চাকরি হারাতে যাচ্ছেন একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। তবে ব্যাংক চাইলে নতুন চুক্তি করে সমপদে নিয়োগ দিতে পারেন।

 

এমডি ও ডিএমডির চাকরি না থাকলেও চাকরি থেকে নূন্যতম তিন বছর পূর্তির আগে ছাটাই করা যাবে না ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবে তিন বছর পর পুনর্গঠিত ব্যাংকের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

 

ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালায় আরও বলা হয়, আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না দুর্বল ব্যাংকের পরিচালক।

 

নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে। তার আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর করতে হবে। এরপর আমানতকারী, সব পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। এরপর বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে ব্যাংককে।

 

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া ক্ষমতার আলোকে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক শীর্ষক সার্কুলার জারি করা হয়।

 

এতে কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতাভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ মানতে হবে। পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে আমানতকারীর স্বার্থে ব্যাংক বাধ্যতামূলক একীভূতকরণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *