কুষ্টিয়া জেলার ২৩০টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

সজীব নন্দী (কুষ্টিয়া ) :

 

কুষ্টিয়া জেলায় ২৩০ টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী আজ।কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব । অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দুসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।

গতকাল  বুধবার ছিল মহাষষ্ঠী। এদিন দেবী দুর্গা শক্তি নিয়ে ভক্তদের কাছে পৌঁছান। গতকাল বুধবার ৮টায় বোধনের পর খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। এর মাধ্যমে দেবী জেগে ওঠেন। আর তাতে দর্শন করা যায় দেবীর।  বুধবার সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে চলেছে দেবীকে জাগানোর জন্য পূজা অর্পণ। পুরোহিতরা জানান, এর মধ্যে দিয়েই দুর্গাপূজা শুরু হয়।

 

আজ বৃহস্পতিবার ( ১০ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এ সময় পূজারীরা প্রতিমার সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন।

কুষ্টিয়া জেলার মন্দিরসহ সব মন্দিরেই সকাল থেকে শুরু হবে সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। এছাড়াও দিনব্যাপী চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলবে বলে জানান সর্বজনীন পূজা আয়োজকরা ।

যদিও দুর্গাপূজা শুরু হলো বুধবার থেকে, তবে দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন–বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন—দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর দেবী দুর্গা আগমন ঘটছে দোলায় চড়ে। দোলায় দেবীর আগমনকে অশুভ বলে মনে করা হয়। বলা হয়, এতে পৃথিবীর ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে, যেটিও অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। সে হিসাবে এ বছর মহামারি বা মড়ক, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ, অতিমৃত্যুর মতো দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে। আগামী শুক্রবার (১১ অক্টোবর) অষ্টমী, শনিবার (১২ অক্টোবর) মহানবমী এবং রবিবার (১৩  অক্টোবর) দশমীর মাধ্যমে বিদায় নেবেন দুর্গা দেবী।

 

মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার  সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। শনিবার  সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন রবিবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।

গতকাল ৯ অক্টোবর বুধবার ২০২৪ তারিখ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপসমূহের পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব পলাশ কান্তি নাথ,(ক্রাইম এ্যান্ড অপস),অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, কুষ্টিয়া, অফিসার ইনচার্জ, কুষ্টিয়া মডেল থানা, টিআই, সদর ট্রাফিক, কুষ্টিয়াসহ সংশ্লিষ্ট অফিসার ও পূজা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

 

দূর্গাপূজা শুভ উদ্বোধন কালে পুলিশ সুপার মহোদয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দদের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময়সহ শারদীয় দূর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে সরকারি সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন করতে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৫২টি মণ্ডপ-মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলার পূজার সংখ্যা ২৩০, গত বছর ছিল ২৫৮ । 

 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,এ বছর কুষ্টিয়া জেলার ২৩০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৭২টি, খোকসা উপজেলায় ৬২টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৫টি, মিরপুর উপজেলায় ২৬টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ৮টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ৭টি মন্দিরে শারদীয় দূর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

 

পূরোহিত রতন চক্রবর্তী বলেন,  গতকাল ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু  হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মা দুর্গা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আমরা পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

 

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জয়দেব বিশ্বাস বলেন, এবার জেলায় ২৩০টি পূজা মন্দিরে সরকারের সকল নির্দেশনা মোতাবেক পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।

 

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে সরকারি সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপন করতে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করা হয়েছে।মণ্ডপে আনসার বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেইসঙ্গে টহল টিমও কাজ করবে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

 

এছাড়া পূজা মন্দিরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্যদের পূজামন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, স্বেচ্ছাসেবক ও গার্ড নিয়োগ এবং পূজা মন্দিরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূজা মন্দিরে পালাক্রমে ডিউটির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিট অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারকে অবহিত করার জন্য সকলকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পূজা মন্দিরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়া আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

 

সনাতনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মা দুর্গা স্বর্গে কৈলাশ পর্বত হতে দোলায় চড়ে মহাষষ্ঠী বুধবার (৯ অক্টোবর, ২২ আশ্বিন)। মহাসপ্তমী পড়েছে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর, ২৩ আশ্বিন)। শুক্রবার (১১ অক্টোবর, ২৪ আশ্বিন) পড়েছে মহাঅষ্টমী। মহানবমী পড়েছে শনিবার (১২ অক্টোবর, ২৫ আশ্বিন)। আর পঞ্জিকামতে শনিবার (১২ অক্টোবর, ২৫ আশ্বিন) রাতে শুরু হয়ে রোববার (১৩ অক্টোবর, ২৬ আশ্বিন) সকাল পর্যন্ত বিজয়ী মহা দশমী ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে এবং মা দুর্গা তার ভক্তদের কাঁদিয়ে ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গে কৈলাশ পর্বতে গমন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *