গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী?

অনলাইন ডেস্ক :

 

গাজা উপত্যকার অবরোধ ভাঙতে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে গঠিত সবচেয়ে বড় নাগরিক নৌবহরের নাম গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। এ উদ্যোগকে কেউ দেখছেন অহিংস মানবিক মিশন হিসেবে, আবার ইসরায়েল বলছে এটি প্ররোচনামূলক ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

ফ্লোটিলার নাম এসেছে ‘সুমুদ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ অটলতা বা অবিচল সহনশীলতা—যা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতীকী জীবনদর্শন। ফ্লোটিলা গঠিত হয় ২০২৫ সালের মাঝামাঝি। এর পেছনে ছিল ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা ও সুমুদ নুসান্তারার যৌথ উদ্যোগ।

প্রায় ৪০টিরও বেশি জাহাজে ৪৪ দেশের ৫০০ অংশগ্রহণকারী যোগ দেন। তাদের মধ্যে আছেন গ্রেটা থুনবার্গ, ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা (নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি), ইতালির সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। ইতালীয় কার্গোতে ছিল প্রায় ৪৫ টন ত্রাণসামগ্রী। এ কারণে এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন নৌবহর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ফ্লোটিলা মূলত গাজায় খাদ্য, ওষুধ, পানি ফিল্টার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তারা জানিয়েছে, এটি একটি শান্তিপূর্ণ, অহিংস মানবিক মিশন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যেই ৩৯টি নৌকা আটক করেছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সুপরিচিত কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, ফ্লোটিলার মাধ্যমে হামাসকে সহায়তা দেওয়া হতে পারে, যা তারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।

ফ্লোটিলা যাত্রা শুরু করে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে সেপ্টেম্বরের শুরুতে। পরে তিউনিশিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ, গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে একে একে নৌযান যুক্ত হয়। পথিমধ্যে তাদের সঙ্গ দেয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। এ উদ্যোগকে সমর্থন জানাতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে—ইতালি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, গ্রীস, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।

বিশেষত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রতিনিধি বহিষ্কার ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে “সন্ত্রাসী হামলা” বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ফ্রান্স ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আটক কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

ফ্লোটিলার আয়োজকরা বলছে, গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের জন্য এটি শুধু ত্রাণ সরবরাহ নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজকে মানবিক সংকটের দিকে নজর দেওয়ার জন্য এক রাজনৈতিক ও নৈতিক বার্তা। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা আইনসঙ্গত নৌ অবরোধ বজায় রেখেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ প্রতিহত করাই তাদের অধিকার।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা তাই কেবল একটি ত্রাণ অভিযান নয়, বরং যুদ্ধ, অবরোধ ও মানবাধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে এক নতুন বিতর্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে।সোর্স: নিউ ইয়র্ক টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *