ক্যান্সারকে হারিয়ে শুটিংয়ে ফিরলেন পুরুষ-হৃদয়ে কাঁপন ধরানো অভিনেত্রী সোনালী বেন্দ্রে

বিনোদন ডেস্ক : নব্বই দশকে বলিউডের রানি ছিলেন তিনি। একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন পুরুষ-হৃদয়ে কাঁপন ধরানো এই অভিনেত্রী। কিছুদিন আগে মাঝেই দেহে বাসা বেঁধেছিল ক্যান্সার। প্রাণঘাতী এই অসুখ এক সময় স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল তার জীবনের পথ। লড়াই করলেও ফিরতে পারবেন কি না সে চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছিল। দিনরাত বিছানায় শুয়ে নিজের মেকআপ ভ্যান, শুটিং ফ্লোর, স্বামী ও ছেলের কথাই ভাবতেন। অবশেষে তীব্র প্রাণশক্তি ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির দ্বারা ক্যান্সারকে হার মানিয়ে পরিচিত জগতে ফিরতে যাচ্ছেন সোনালী বেন্দ্রে।

বলিউডের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর দুর্দান্ত কামব্যাক বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারে বিশ্বের সব ক্যন্সার আক্রান্তকে। ২০১৮ সালে জানা যায়, সোনালীর দেহে ‘হাই গ্রেড মেটাস্টেসিস ক্যন্সার’ বাসা বেঁধেছে। নিজেই টুইট করে এই সংবাদ দেন সবাইকে। নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা চলাকালীনই প্রথম ক্যন্সারের খবর কীভাবে তাকে ও তার পরিবারকে বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছিল, টিভি শোতে এসে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। সোনালী বলেছিলেন, ক্যন্সার হয়েছে শুনে আমি সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। শুধু কেঁদেছি। আর ভেবেছি, কেন আমার সঙ্গেই এমনটা হলো?

১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের এক মরাঠা পরিবারে জন্ম হয় সোনালির। ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান ও অভিনয়ের প্রতি অদম্য টান ছিল তার। মুম্বাইয়ের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও ঠাণের হলি ক্রস কনভেন্ট থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করে মুম্বাইয়ের রামনারায়ণ রুজা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। স্কুল শেষ করার পর থেকেই মডেলিং করতে শুরু করেন সোনালি। ক্যারিয়ার মডেলিং দিয়ে শুরু হলেও এই সময়ই টুকটাক কিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতেও কাজের অফার আসতে থাকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই চিত্রপরিচালক কে রবিশংকরের নজরে আসেন তিনি। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘আগ’। এই ছবিই তাকে এনে দেয় সেরা নতুন মুখের পুরস্কার।

এভাবেই শুরু হয় সোনালীর অগ্রযাত্রার। ‘আগ’ ছবির সাফল্যের পর বলিউডি ও দক্ষিণী নানা ছবির অফার প্রস্তাব আসতে থাকে। ১৯৯৬ সালে মাইকেল জ্যাকসন ভারতে আসলে তাকে স্বাগত জানাতে বলিউডের পক্ষ থেকে সোনালিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ততদিনে ‘রক্ষক’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’, ‘আপনে দম পর’, ‘সপুত’ এর মতো ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি মাত করে দিয়েছেন সোনালী। প্রতিটি ছবির টাইটেল কার্ডেই নতুন এই নায়িকার নাম যোগ করত আলাদা আবেদন। ‘নারাজ’, ‘জখম’, ‘অঙ্গারে’ এসব ছবিগুলো চলতই সোনালির নামে। শুধু সৌন্দর্য নয়, অভিনয়গুণেও বিখ্যাত নায়িকাদের সঙ্গে টক্কর দিতেন তিনি।

২০০১ সালে তেলুগু ছবির ডেবিউ করেন সোনালি। তেলুগু ফিল্ম-ইতিহাসে এই ‘মহেশ বাবু’ ছবিটি আজও বিখ্যাত।১১১৭sonaliশুধু বড়পর্দাই নয়, সোনালি ২০০১ সালে টেলিভিশনের জগতে প্রবেশ করেন। এক বেসরকারি চ্যানেলের নাচের রিয়েলিটি শো সঞ্চালনার কাজ দিয়েই শুরু হয় তার যাত্রা। এরপর গান ও নানা প্রতিভার ট্যালেন্ট হান্ট শো সালের সঞ্চালক ও বিচারক হিসেবে সোনালিকে দেখা গেছে। মাঝে ২০০২ সালে বহু দিনের বন্ধু পরিচালক গোল্ডি বেহলকে বিয়ে করেন সোনালি। ২০০৪ সালে জন্ম নেয় তাদের পুত্রসন্তান। এই সময় সংসার সামলে ছেলেকে একটু বড় করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোনালি।

সব ঝামেলার শেষে ২০১২ সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ ছবিতে কামব্যাক করেন সোনালি। তারপর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফিল্ম ও টেলিফিশন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এই জনপ্রিয় নায়িকা। রোমান্স, অ্যাকশন এবং কমেডি মিলিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি বলিউডি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। ২০১৮ সালের পর জীবনের এই কঠিন অধ্যায়েও এতটুকু মনোবল হারাননি তিনি। এই বিপর্যয়ে পুরো পরিবারকে পাশে পান তিনি। নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা চলাকালীন সোনালির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন একাধিক বলিউড তারকা।

ক্যন্সারের কেমোথেরাপি কেড়ে নিয়েছিল সোনালির মাথার চুল। কিন্তু সে অবস্থাতেও প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি। বরং সাহস দিয়েছেন অন্যদেরও। তাকে দেখে যাতে অন্য ক্যন্সার আক্রান্তেরা সাহস সঞ্চয় করতে পারে, সেই চেষ্টাই করেছেন প্রতিদিন। সোনালির এমন ভূমিকাকে সবাই শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও একটু ভাল হতেই শুটিং ফ্লোরেও ফিরেছেন তিনি। সোশ্যাল সাইটে সোনালী নিজেই এই তথ্য জানিয়ে লিখেছেন, ‘অনেক কিছু ঘটে যাওয়ার পর সেটে ফিরলাম। কাজে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। আসলে অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারব না। কাজেই তো ফিরতে চেয়েছিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *