

ডেস্ক নিউজ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক সংঘটিত আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধসহ সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবার ক্যাপাসে সকল প্রকার সন্ত্রাস রুখে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) শপথ নেওয়ার জন্য বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা বুয়েটের মিলনায়তনে জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। শপথ শুরুর আগে বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথ পড়ান বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিয়া রিজওয়ানা।
এ সময় শপথ অনুষ্ঠানে বুয়েটের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হলের প্রভোস্টরা শপথ নেন। তবে শিক্ষকরা মিলনায়তনে উপস্থিত থাকলেও শপথে অংশ নেননি।
শপথে বলা হয়, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সব প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকব। আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেব। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সমূলে উৎপাটিত করব। এই আঙিনায় আর যেন কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়। আর কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।’
এই শপথের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান আন্দোলন আজকের গণশপথের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে।
তবে মাঠের আন্দোলনের ইতি ঘটলেও প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শপথ গ্রহণ শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই বুয়েট প্রশাসনকে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের দিকে যাওয়ার জন্য। আজকে শপথের মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন শেষ হলেও ১০ দফা দাবির বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষেণ চলবে।’
শপথ অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চার্জশিট হওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সময় নষ্ট না করার আহ্বান জানান উপাচার্য।
গত ৬ অক্টোবর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তদারকির নামে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর ছাত্রলীগের ঘোষিত টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে শাখা ছাত্রলীগের কয়কজন নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় পরদিন ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিসহ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।











