শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব আজ মহাষষ্ঠী

অনলাইন ডেস্ক :

 

মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আজ থেকে সারা দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনের সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। সারা দেশে বইছে উৎসবের আমেজ। এছাড়া পুরান ঢাকায় জমজমাট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে দুর্গোৎসবের। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের পর দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হবে। সন্ধ্যাবেলায় দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস হবে। এ আমন্ত্রণই হলো বোধন। রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা।

 

দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সর্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আসুন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখি।

 

অপরদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।

 

ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিল্ল নিমন্ত্রণ পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘দুর্গোৎসব’। আজ মহাষষ্ঠী। কল্পারম্ভে ঘট   স্থাপন, অকালবোধন, অধিবাস শেষে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবীকে। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে শুরু হলো দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। পরদিন সপ্তমী তিথীতে নবপত্রিকা স্নান ও  সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে কলাবউ স্থাপন করা হবে। এইদিনেই প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃন্ময়ীতে। সোমবার মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবে। এইদিনই হবে সন্ধীপূজা। মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় দেবীর ৬ষ্ঠ রূপ ‘উমা’।

ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত: নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ৫ই অক্টোবর দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। আর দেবীর এই আগমনকে ঘিরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের পূজা সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষি ইনস্টিটিউটের দুর্গাপূজা মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্রবেশদ্বার।

 

রাস্তার উপর সাজানো হয়েছে লাল-নীল বাতি দিয়ে। হলুদ কাপড়ের ওপর সাদা শোলার বাহারি ডিজাইনে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে মূল মণ্ডপ। চোখ ধাঁধানো মণ্ডপে প্রবেশে নারী-পুরুষ উভয় দর্শণার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আছে নির্ধারিত আসন ব্যবস্থাও। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো পূজাঙ্গন। লাল-সবুজ আর সাদা রঙে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের অবায়ক অন্য রকম শোভা বাড়াচ্ছে।  এদিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রতিমা আবার রেখে দেয়া হয় বছরজুড়ে। তাই এখানকার প্রতিমা তৈরিতে একটু বেশিই নজর দেয়া হয়। রঙ-তুলির আঁচড় শেষে ত্রিশূল, চক্র, ঢাল-তলোয়ারসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে দশভূজাকে। রাস্তার পাশে গেট, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা, বিভিন্ন ব্যানার দিয়ে জমকালো সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অন্দর-বাহির। পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মন্দিরেও দুর্গাপূজায় থাকছে বিশেষ আয়োজন। পূজায় আগত দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে হলের গেট থেকে শুরু করে মন্দির, মাঠ, পুকুর পাড় সবখানেই আলোর ছটা।  ঐতিহ্যবাহী বনানী মাঠে আয়োজিত দুর্গা মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রস্তুত করা হয়েছে মহামায়া দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। বাহারি সব রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব প্রতিমা। রঙ- বেরঙের আলোকসজ্জা আর নানা রঙের ডিজাইনের কাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজাঙ্গন।

 

গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচদিনই থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। অপরদিকে, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।  ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এবছর উমা’র আগমন গজে এবং ফিরে যাবেন নৌকায়। মায়ের গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি।  এ বছর দেশের অনেক স্থান বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে, অনেক শস্যাদি নষ্ট হয়েছে।  তারই একটা প্রভাব আসছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগের তুলনায় এবারও কিছু পূজার আয়োজন বেড়েছে। গত বছরে দুর্গাপূজার সময় দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর প্রশাসন অনেক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। তাই বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই বিশাল আয়োজন সকলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখরভাবে পালনে আমরা আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *