মাটি খুঁড়তেই মিলছে সুলতানি আমলের স্থাপত্যের নিদর্শন

নিউজ ডেস্ক :

 

মাটি খুড়তেই একে একে বেরিয়ে আসছে সুলতানি আমলের স্থাপত্যের বিভিন্ন নির্দশন। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে সুলতানি আমলের সিঁড়ি আবার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে প্রাচীর। নড়াইল সদর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামে ৩২ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব প্রত্নবস্তু। লোকমুখে কথিত আছে এক সময় এ জায়গায় বসবাস করতেন এক পাতালভেদি রাজা। কিন্তু ইতিহাসে নড়াইলের পাতালভেদি রাজার সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ষষ্ঠ শতকে এখানে তাদের বসবাস ছিল বলে ধারণা স্থানীয়দের।

যুগের পর যুগ কেউ কোনো খোঁজ-খবর না নিলেও অবশেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ২০১৪-১৫ সালের জরিপে এই স্থানটি চিহ্নিত করা হয়। পরে ২০২২ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ এই বছরের পহেলা এপ্রিল ঢিবির নিচে কোনো স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ লুকায়িত আছে কি-না তা জানতে পরীক্ষামূলক খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়। পরীক্ষামূলক এই খনন কাজে এখন পর্যন্ত পাতালভেদি রাজার বাড়ির কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি। তবে ইতিমধ্যে এখান থেকে যেসব প্রত্নবস্ত পাওয়া গেছে তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি সুলতানি আমলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপত্যের নিদর্শন । গভীরভাবে খনন করলে হয়তো হারিয়ে যাওয়া আরও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছোটবেলা থেকে শুনছি এখানে পাতালভেদি রাজার বাড়ি ছিল। এখন দেখছি এখানে খনন করে মাটির নীচে থেকে বিভিন্ন স্থাপত্য ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক খননে যখন এত কিছু পাওয়া গেছে তখন আরো খনন করার উচিত। খনন করলে আরো অনেক কিছু পাওয়া যেতে পারে। মাটির নিচে লুকায়িত আরো কোন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকলে তা জনসম্মুখে আনার দাবি করেন এলাকাবাসী।

 

এদিকে খনন কাজ শুরুর পর থেকে প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নয়াবাড়িতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রত্নবস্ত উদ্ধারের খবর শুনে এখানে এসেছেন তারা। তারা বলছেন, এখানে এসে দেখলাম মাটির নীচ থেকে প্রাচীর ও একটি সিঁড়ি পাওয়া গেছে। ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে অবশ্যই গভীর অনুসন্ধান করার প্রয়োজন আছে।

এ ব্যাপারে খনন কাজ পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, মাটির নিচে কোনো বিলুপ্ত স্থাপনা আছে কি-না তা চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য পরীক্ষামূলক যে খনন কাজ এখানে করা হয়েছে তাতে শতভাগ সফলতা এসেছে। ইতিমধ্যে সুলতানি আমলের স্থাপনার বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গভীরভাবে খনন প্রয়োজন। আমরা অনুমান করছি এর নীচে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ আছে। নড়াইল জেলার ইতিহাস পুনর্গঠনে এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *