জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, আজ থেকে কার্যকর

অনলাইন ডেস্ক :

 

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এতে প্রতি লিটার পেট্রল তিন টাকা ও অকটেন চার টাকা কমেছে। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে দাম কমেছে ৭৫ পয়সা।শুক্রবার (৮ মার্চ) থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।

 

বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা এবং পেট্রলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা করা হয়েছে। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে।ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হয়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজেলের দাম সামান্য কমার প্রভাব গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন এবং কৃষি ও সেচ কাজে তেমন পড়বে না। তবে পেট্রল ও অকটেনের দামের প্রভাব কিছুটা হলেও বাজারে পড়বে।

 

এদিকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি।

এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়। 

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ বা প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়। বাকি ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলে।

অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময় মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। 

জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এরপর ২৩ দিনের মাথায় ওই মাসের শেষ দিকে প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা করে কমানো হয় দাম।

 

জ্বালানি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, জ্বালানি তেলের সর্বশেষ মূল্য সমন্বয় হয় ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট। এরপর কভিড মহামারি-উত্তর সরবরাহ সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে সমুদ্রপথে জ্বালানি পণ্যের প্রিমিয়াম, পরিবহন ভাড়া, বিমা ও ব্যাংক সুদের হার ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। উল্লিখিত সময়ে শুধু মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা অবমূল্যায়িত হয়েছে এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের (প্রধানত ডিজেল) মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

 

আরো বলা হয়, ফর্মুলা বা গাইডলাইন অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের আমদানি বা ক্রয়মূল্যের আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করা হবে।

 

জ্বালানি বিভাগ জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও উন্নত বিশ্বে প্রতি মাসেই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। আবার কমলে দাম কমবে। দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২.৭৬ রুপি বা ১৩৩ টাকা ৫৭ পয়সা এবং পেট্রল ১০৬.৩ রুপি বা ১৫২ টাকা ৬৮ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। এটা বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে প্রায় ২৪ টাকা ৫৭ পয়সা ও ২৭ টাকা ৬৮ পয়সা বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *