অনলাইন ডেস্ক : চাঁদাবাজিসহ যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচার হবে যুবলীগের নিজস্ব ‘ট্রাইব্যুনালে’৷ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য এরইমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘যুবলীগের এই ট্রাইব্যুনাল চালু আছে অনেক দিন ধরেই৷ ট্রাইব্যুনালের প্রধান হলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান৷ আর প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এর মেম্বার৷ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ট্রাইব্যুনাল বসে৷”
গত শনিবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কামটির বৈঠকে ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া ছাড়াও যুবলীগে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ শুধু তাই নয় তিনি কয়েকজন নেতার নাম ধরে তাদের ‘ অপকর্মের’ কথাও তুলে ধরেন৷ জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে কিছু ছবিও দেখান৷ তিনি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও আংশিক তুলে ধরেন৷ বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান,‘‘শেখ হাসিনা যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম ধরে বলেন ওরা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ৷”
অবশ্য এটাই প্রথম নয়৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণবভবনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদকে যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে বলেন৷ কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ভবন নির্মান থেকে চাঁদা দাবীর অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন ক্ষুব্ধ হন৷ আর চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে৷ জানা গেছে তার বিরুদ্ধে ‘চরম’ ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশও দেয়া হয়েছিল৷ পরিস্থিতি বুঝে তখন তিনি দেশের বাইরে চলে যান৷ এরপর প্রভাবশালী মহলে দেন দরবার করে তার জন্য৷ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন৷ তারও ওপর চাপ এখনো আছে৷ তার সহযোগীরা এখানো বেপরোয়া৷ দক্ষিণেরই সাংসগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলাফেরা করেন৷ তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ আছে৷
জানাগেছে যুবলীগের কিছু নেতার এখন আয়ের প্রধান উৎস ‘ ক্যাসিনো’ ব্যবসা৷ সেগুন বাগিচা এলাকার একটি ভবনেই আছে এরকম তিনটি ক্যাসিনো৷ আর ঢাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে কম করে হলেও ৫০টি ক্যাসিনো৷ জুয়া খেলার ব্যবসার জন্যই এইসব ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়েছে৷ আর জুয়ার ব্যবসা করে কেউ কেউ ফুলে ফেঁপে উঠছেন৷ তারা আবার দেশের বাইরেও ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যান৷ ক্যাসিনোগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণ ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ কয়েক নেতার হাতে৷ কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্তত: দুজন নেতাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযযোগ আছে৷
এদিকে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বাড়ি ও জমি দখলের৷ ঢাকার পুরো মিরপুর এলাকায় সে এই কাজে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে৷ তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার পাশেই একটি জেলায় ৷ সে সংসদ নির্বাচনে গ্রামের বাড়ি এলাকা থেকে মনোনয়নেরও চেষ্টা করেছিল৷ আর সয়েদাবাদের বাস টার্মিনাল, শিক্ষাভবনসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েকজন যুবলীগ নেতা৷
যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট তার বিরুদ্ধে আঞ্জুমানের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি দাবি করেন,‘‘আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে৷ কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷” আর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে চলার অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
তার এলাকার কিছু যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘এগুলো কারা করে আমার জানা নাই৷”
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন,‘‘সম্রাটের বিরুদ্ধে আঞ্জুমানের অভিযোগ নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছিলাম ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য৷ তবে আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই বলে লিখিত দেয়া হলে আমরা আর এগোতে পারিনি৷ তবে আমরা বেশ কয়েক জনের বিচার করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি৷”
যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ প্রসঙ্গে তিনি বলে ,‘‘গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী গণবভনে এক অনুষ্ঠানে যুবলীগ দক্ষিণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সত্য৷ তবে তখন তিনি কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন কিনা আমার তা জানা নেই৷ কারণ আমি একটু দূরে ছিলাম৷ তবে তিনি কমিটি যদি ভেঙে দিতে বলতেন তাহলে ভেঙেই দিতে হত৷ কারণ তিনি আমাদের নেত্রী৷ আর শনিবারের ওয়ার্কিং কামিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নিয়ে কী বলেছেন তা আমাদের জানা নেই৷ আমরা সেখানে ছিলামনা৷ আমাদের চিঠি দিয়েও তিনি কিছু জানাননি৷ আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি৷”
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি
তবে যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা আমলে নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে৷ আর এই সব অভিযোগের বিচারের জন্য সহসাই ট্রাইব্যুনাল বসবে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন,‘‘যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব অভিযোগ আসছে তা আমরা সংগ্রহ করছি৷ আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু না জানালেও আমরা ব্যবস্থা নেব৷ আর সেই ব্যবস্থা হবে আমাদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে৷”
ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন,‘‘আমরা শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই৷ প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে৷”
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি৷ বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, এই শুদ্ধি অভিযানের তালিকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের তিন এবং ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর মিলিয়ে আরো সাত জন নেতার নাম আছে৷
নিউজ : DW.COM