রাত পোহালেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সৌদির নজিরবিহীন প্রস্তুতি

অনলাইন ডেস্ক :

আজ রাত থেকেই শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ৭ জিলহজ দিবাগত রাত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো হজযাত্রী মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন। মক্কার কাবা শরিফ বা নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে ইহরাম বেঁধে তাঁরা মোয়াল্লিমদের তত্ত্বাবধানে মিনা পৌঁছাচ্ছেন।

হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম মূলত ৮ জিলহজ মিনায় গমন ও অবস্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

এ দিন জোহর থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত ও মোস্তাহাব। এ সময় হাজিরা মিনায় অবস্থান করে তাকবির, তাসবিহ, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াতে সময় কাটান।

মিনায় লাখো হাজির অবস্থানের জন্য সাদা তাঁবুতে তৈরি হয়েছে একটি সাময়িক শহর। বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানি ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিশাল তাঁবু নগরী গড়ে তোলা হয়েছে। মক্কা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনার চারপাশ ঘিরে রয়েছে পাহাড়। এর এক পাশে ‘জামরায়ে আকাবা’ এবং অন্য পাশে রয়েছে ‘ওয়াদিয়ে মাহসার’।

এবারের হজে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী মক্কায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে সৌদি প্রশাসন চালু করেছে উন্নতমানের মেট্রো সার্ভিস ও বাসবহর।

৭ দিনে ৫ হাজারবার ট্রেন চলবে মিনার পথে
‘আল মাশায়ের আল মোকাদ্দাসা মেট্রো লাইন’ নামে পরিচিত ট্রেনটি এবারের হজে সাতদিনে প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রীকে সেবা দেবে। এটি শুধুমাত্র হজ মৌসুমেই সীমিত সময়ের জন্য চালু থাকে এবং পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে শাটল সার্ভিস হিসেবে কাজ করে। এবারের হজে এই ট্রেন ৫ হাজার বার চলাচল করবে বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।

পরিবহন ও লজিস্টিকস বিভাগের মুখপাত্র সালেহ আল-জাওয়াইদ জানান, হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে অন্তত ২৫ হাজার বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাস্তাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার পথ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে স্ক্যান করা হয়েছে। কিছু যানবাহনে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সৌদির লক্ষ্য: ইতিহাসের সেরা হজ ব্যবস্থাপনা
সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের হজ সফল করতে ২০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছেন। চিকিৎসা সুবিধা দিতে মাঠে রয়েছে চিকিৎসা দল ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু ও বিশ্রাম কেন্দ্র।

হজ বিষয়ক যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক মুখপাত্র সাদ আল-শানবারি জানিয়েছেন, মক্কা, মদিনা এবং পবিত্র স্থানগুলোতে ৯৯ শতাংশ ফোরজি ও ফাইভজি কভারেজ নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি হজযাত্রীদের জন্য ১০ হাজার ৫০০ ওয়াইফাই পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে ইন্টারনেটের গতি।

সৌদি প্রশাসনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এবারের হজ ব্যবস্থাপনাকে সাফল্যের নতুন এক মানদণ্ডে নিয়ে যেতে চাই।’ হজের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত এবং যোগাযোগব্যবস্থা সবদিক থেকেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

হজ: বিশ্ব মুসলমানের মিলনমেলা
হজ হলো শান্তি, সংহতি ও আত্মশুদ্ধির এক মহাসমাবেশ। প্রতিবছর লাখো মুসলমান এখানে একত্র হন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। সৌদি আরব এবার এই মহাসমাবেশকে সফল, নিরাপদ ও স্মরণীয় করতে নিয়েছে সবোর্চ্চ প্রস্তুতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *