বার্সেলোনা জিতল মেসির নৈপুণ্যে

খেলার খবর : ২৪টি শট নিলেন দলের খেলোয়াড়রা। তার মধ্যে সাতটি ছিল লক্ষ্যে। এমন পরিসংখ্যানে ধারণা হতেই পারেই শটগুলো হয়তো নিয়েছে বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। কিন্তু তা নয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্লাভিয়া প্রাগ এদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল কাতালান শিবির। একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত রেখে গোল আদায় করে নিতে পারে মাত্র একটি। উল্টো আত্মঘাতী গোল খেয়ে হেরেই যায় তারা। ঘরের মাঠে বার্সেলোনার কাছে ১-২ গোলের ব্যবধানে হার মানে চেক রিপাবলিকের ক্লাবটি।

মূলত বার্সেলোনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির কাছেই হারে প্রাগ। ম্যাচের শুরুতেই অতিথিদের এগিয়ে দেন এ আর্জেন্টাইন। আত্মঘাতী গোলটি আদায় করে নেওয়ার পেছনেও ছিল তার দারুণ অবদান। আরও কিছু দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় তা থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি তারা।

এদিন ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। আর্থুর মেলোর সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৫ আসরে গোল করার কীর্তি গড়লেন বার্সা অধিনায়ক। পাশাপাশি ছুঁয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও রাউল গনসালেজের রেকর্ডও। তাদের সমান সর্বাধিক ৩৩টি দলের বিপক্ষে গোল করার রেকর্ডের মালিক এখন মেসিও।

এগিয়ে গিয়ে মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ রেখেই খেলতে থাকে বার্সা। তবে ভালো কোন আক্রমণ করতে পারছিল না। ২০তম মিনিটে তো পিছিয়ে পড়তে পারতো তারা। ইয়ারোস্লাভ জেলেনির শট দারুণ দক্ষতায় পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। নয় মিনিট সুযোগ ছিল লুইস সুয়ারেজের। কিন্তু তার শট লক্ষ্যে থাকেনি।

৩৫তম মিনিটে বার্সেলোনাকে রক্ষা করেন স্টেগেন। জেলেনির পাস থেকে দারুণ এক জোরালো শট নিয়েছিলেন লুকাস মাসোপুস্ট। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক। পরের মিনিটে মিনিটে তো অবিশ্বাস্য স্টেগেন। পিটার ওলাইঙ্কার শট দুর্দান্ত দক্ষতায় বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দলকে রক্ষা করেন বার্সা গোলরক্ষক।

৪০তম মিনিটে প্রাগ গোলরক্ষক ওন্দ্রেজ কোলারও দারুণ সেভ করেন। সুয়ারেজের পাস থেকে ডি ইয়ংয়ের কোণাকোণি শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। বিরতির পর পঞ্চম মিনিটেই সমতায় ফেরে প্রাগ। মাসোপুস্টের পাস থেকে ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শটে স্টেগেনকে পরাস্ত করেন জান বরিল। সমতায় ফিরে আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায় স্বাগতিকদের

৫৪তম মিনিটে নিকোলে স্টাঞ্চুর শট অল্পের জন্য বার পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। তবে তিন মিনিট পর নিজেদের ভুলে ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। মেসির ফ্রিকিক প্রাগের এক ডিফেন্ডার ঠিকভাবে ফেরাতে না পারলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান সুয়ারেজ। প্রায় শূন্য ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে তার নেওয়া শট ওলায়েঙ্কার পায়ে লেগে দিক বদলে জালে জড়ালে আবার পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।

৫৯ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো প্রাগ। কর্নার থেকে টমাস সাউচেকের নেওয়া হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। আট মিনিট পর ব্যবধান বাড়াতে পারত বার্সেলোনাও। জর্দি অলবার সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান প্রাগ গোলরক্ষক কোলার।

৭০ মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি মিস করেন সুয়ারেজ। মেসির বাড়ানো বলে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু সময় পেয়েও বারপোস্টের বাইরে মারেন এ উরুগুইয়ান তারকা। পাঁচ মিনিট পর ফাঁকা গোলবার পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি মেসি। এক সতীর্থের ক্রসে আলতো টোকায় গোলমুখে বল ঠেলে দিয়েছিলেন অলবা। ফাঁকায় ঠিকভাবে বলে সংযোগ করতে না পারায় নষ্ট হয় সে সুযোগ। ৮২তম মিনিটে আবারো দারুণ সেভ করেন প্রাগ গোলরক্ষক কোলান। দেম্বেলের পাস থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। তবে ঝাঁপিয়ে পরে তা ঠেকিয়ে দেন তিনি। সাত মিনিট পর মেসির আরও একটি দারুণ শট ফিরিয়ে দেন প্রাগ গোলরক্ষক।

ম্যাচের যোগ করা সময়ে আবারও বার্সার ত্রাতা স্টেগেন। কর্নার থেকে ভালো হেড নিয়েছিলেন ওলায়েঙ্কা। ঝাঁপিয়ে পড়ে স্টেগেন তা ঠেকিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পায় অতিথিরা। শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। ভালো শট নিয়েছিলেন বরিল। কিন্তু এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বার পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে রক্ষা পায় বার্সা। স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *