ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে আজ পিএসজির মুখোমুখি চেলসি

অনলাইন ডেস্ক :

রোববার নিউইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ার ম্যাচ। ক্লাব বিশ্বকাপের নতুন ৩২-দলীয় ফরম্যাটে প্রথম চ্যাম্পিয়নের মুকুট উঠবে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) না চেলসির মাথায় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

যুক্তরাষ্ট্রে মাসব্যাপী চলা এই টুর্নামেন্টে দর্শকখরা, তীব্র গরম ও ম্যাচ বিলম্বের মতো নানা বিতর্ক থাকলেও, সবকিছু ছাপিয়ে শিরোপার লড়াইয়ে এখন ইউরোপের দুই জায়ান্ট। ইতোমধ্যেই লিগ ওয়ান, ফরাসি কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে বসে থাকা লুইস এনরিকের পিএসজি এবার চায় বিশ্বকাপ শিরোপা।

অন্যদিকে ইউরোপা কনফারেন্স লিগ জেতা এনজো মারেস্কার চেলসির লক্ষ্য সব ধরনের বড় শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়া।
কাগজে-কলমে পরিষ্কার ফেভারিট পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা, যা ইউরোপীয় ফাইনালের ইতিহাসে অন্যতম বড় জয়। এরপর সেমিফাইনালে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকেও।

অন্যদিকে, প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকিট নিশ্চিত করা চেলসি পরে কনফারেন্স লিগ জিতেছে। শক্তির দিক থেকে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান অনেক। তবে চেলসি ধাপে ধাপে উন্নতি করেছে, এবং এখন মাত্র ৯০ মিনিট দূরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে। পিএসজি ফেভারিট হলেও, চেলসি প্রমাণ করেছে তারা কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে জানে। কাজেই, ম্যাচটা যেকোনো দিকে যেতে পারে।

এই টুর্নামেন্টে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে পিএসজি। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০, বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ এবং রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে তারা। যদিও গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের বোটাফোগোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। তবে সেদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি ছিল। ডেম্বেলে, জোয়াও নেভেস, ফাবিয়ান রুইজ ও মার্কিনিয়োস খেলেননি।

চেলসি গ্রুপ পর্বে ফ্লামেঙ্গোর কাছে ৩-১ গোলে হেরে কিছুটা চাপে পড়েছিল। এরপর এসপেরান্সকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে তারা। সেখানে বায়ার্ন মিউনিখের হোঁচট খাওয়ার কারণে চেলসির ভাগ্যে জোটে সহজ প্রতিপক্ষ বেনফিকা, যাকে অতিরিক্ত সময়ে ৪-১ গোলে হারায় ব্লুজরা। এরপর পামেইরাসকে ২-১ এবং ফ্লুমিনেন্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করে চেলসি। এই টুর্নামেন্টে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছিল ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সুবাদে।

এই দলে স্টার বলতে গেলে পুরো একাকার! তবে ওসমান ডেম্বেলেকে আলাদা করতেই হবে। ৫২ ম্যাচে ৩৫ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট করা ফরাসি ফরোয়ার্ড এখন ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় দাবিদারদের একজন। তার সঙ্গে রয়েছে কভিচা কভারাতসখেলিয়া ও ডেসিরে দুয়ের মতো উইঙ্গার, রুইজ-নেভেস-ভিতিনহার মতো মাঝমাঠের ত্রয়ী, আর বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুলব্যাক হাকিমি ও নুনো মেন্ডেস।

ওদিকে কোল পামারই ছিলেন চেলসির মূল ভরসা। তবে এখন সেই দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন নতুন সাইনিং জোয়াও পেদ্রো। ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে দুটি গোল করেন সাবেক ব্রাইটন ফরোয়ার্ড। তাদের সঙ্গে আছে নতুন যোগ দেওয়া লিয়াম ডেলাপ ও জেমি গিটেনস। তবে মায়ামিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে হলে মূল ভূমিকা নিতে হবে পামার ও পেদ্রোকেই।

মাঝমাঠে ময়েসেস কাইসেডো ফিট থাকাটা হবে বড় ফ্যাক্টর। সেমিফাইনালে চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ফাইনালে খেলতে না পারলে পিএসজির শক্তিশালী মিডফিল্ড সামলানো কঠিন হবে চেলসির জন্য।

পিএসজির ৪-৩-৩ ফরমেশন দারুণ কার্যকর, যা মূলত তাদের শক্তিশালী মিডফিল্ড ঘিরেই তৈরি। চেলসির ৪-২-৩-১ ফরমেশন অনুযায়ী মাঝমাঠে তারা সংখ্যায় পিছিয়ে থাকবে। কাইসেডো না থাকলে মারেস্কাকে কৌশলে বড় পরিবর্তন আনতেই হবে। শুধু মাঝমাঠই নয়, পিএসজির দুই ফুলব্যাক হাকিমি ও মেন্ডেস এবং উইঙ্গাররা চেলসির দুই ফুলব্যাক কুকুরেলা ও রিস জেমসকে চাপে ফেলবে।

জেমস ও কুকুরেলা সাধারণত আক্রমণপ্রবণ খেলোয়াড় হলেও, এই ম্যাচে তাদের রক্ষণেই বেশি মনোযোগ দিতে হতে পারে। কাগজে পিএসজি এগিয়ে, কিন্তু ফুটবলে বল গোল। ফাইনালের মঞ্চে চাপ সামলাতে পারলেই চমক দেখাতে পারে তরুণ চেলসি। আর না পারলে বিশ্ব সেরার মুকুট উঠবে পিএসজির মাথায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *