ন্যাশনাল ডেস্ক : নারী উদ্যোক্তা বিউটি বেগম (২৬) একজন দক্ষ শ্রমিকের মতো লেদ মেশিন চালান। তৈরি করেন মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যান্ত্রাংশ। শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ার ‘সিয়াম মোটরস’ নামের এই কারখানায় তৈরি যন্ত্রাংশ এখন সারা দেশেই যাচ্ছে। গরিব অসহায় তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এ কারখানায়। অন্যদিকে কারখানায় উৎপাদিত যন্ত্রাংশ শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কে শোরুম খুলে বিক্রি করছেন স্বামী তোফাজ্জেল হোসেন মানিক। বিউটি বেগম মনে করেন, তাঁর কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হলে ভারত, চীন থেকে মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ হবে। তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমবে।
বিউটি বেগম একজন সাধারণ গৃহবধূ। স্বামী তোফাজ্জেল হোসেন মানিক অনেক আগে ঢাকার ইসলামবাগে কিছু যন্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এ প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি স্ত্রীকেও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন। ২০১২ সালে স্ত্রী বিউটি বেগম চার লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে একটি বল প্রেসার মেশিন ও দুটি প্লাস্টিক চাপা মেশিন কিনে ছোট আকারে কারখানা চালু করেন। বিউটি বেগম ও তাঁর স্বামী মানিক দুজন মিলে প্রথমে মোটরসাইকেলের চেনকভার রাবার, ডাম্পার বুশ, সিট রাবার তৈরি করতেন। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের উৎপাদিত যন্ত্রাংশের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
আস্তে আস্তে কারখানার প্রসার ঘটানোর জন্য একটি লেদ মেশিন, একটি ওয়েল্ডিং মেশিন, তিনটি গ্রান্ডিং মেশিনসহ আরো দুটি বল প্রেসার মেশিন, স্প্রিং তৈরির চারটি ম্যানুয়াল মেশিনসহ আরো কিছু যন্ত্রপাতি কিনে নতুন উদ্যমে কারখানা চালু করেন। বর্তমানে এই কারখানায় সব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের পাদানি, নানা ধরনের প্লাস্টিক বুশ, বিভিন্ন যানবাহনের ১৩৭ রকম স্প্রিং তৈরি হয়। এ ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের ব্রেক শু প্রেসটিংয়েরও কাজ হয়। কারখানার পুরাতন কর্মচারী স্বামী পরিত্যক্তা শাহিদা বেগম (৪৭) বলেন, এখানে আমি হাতে-কলমে কাজ শিখে এখন নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করছি। মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা আয় করছি। তাতে আমার সংসার চলছে। কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমার কারখানার আয়াতন বড় করে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা যন্ত্রপাতি বিদেশেও পাঠাতে পারি।
বিউটি বেগমের এই কারখানা ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএমই মেলায় ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং’ শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। মানিক বলেন, আমাদের কারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশের প্রায় সব জেলায় যাচ্ছে।