হাইকোর্টের রায় : সারা দেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ

অনলাইন ডেস্ক : সারা দেশে টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে তাস, ডাইস, হাউজি খেলাসহ সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে সকল ক্লাবকে ‘পাবলিক প্লেস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্লাবসহ জনসমাগম স্থানে জুয়ার উপকরণ পাওয়া গেলে তা জব্দ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের খেলার অনুমতি দাতা, খেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ  সোমবার এ রায় দিয়েছেন। ঢাকা ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ১৩টি অভিজাত ক্লাবে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনে এ রায় দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা। হাউজি, ডাইস, থ্রি কার্ড, ফ্লাস, ওয়ান টেনসহ এ জাতীয় অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব খেলার আয়োজন করা অপরাধ। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।

আদালত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে বলেন, বর্তমান সরকার ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়, এই অভিযানের মূখ্য উদ্দেশ্যে হচ্ছে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলাকে নিরুৎসাহিত করা।

আদালত বলেন, ১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে ঢাকা মহানগরীর বাইরে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই আইনে সাজার পরিমাণ খুবই নগন্য। মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড। এই আইন সংশোধন করে সাজার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

আদালত বলেন, ঢাকা মহানগরীর ভিতরে জুয়া খেললে জুয়া আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুয়া আইন বৈষম্যমূলক। কারণ সংবিধানেই বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান।

আদালত বলেন, অপরাধ অপরাধই। এখানে ধনি ও গরিবের বৈষম্যর সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সামিউল হক ও অ্যাডভোকেট রোকন উদ্দিন মো. ফারুকের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর এক আদেশে টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ১৩টি ক্লাবে তাস, ডাইস ও হাউজি খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। একইসঙ্গে টাকা বা অন্য কোনো বিনিময়ে জুয়া জাতীয় অবৈধ ইনডোর গেইম যেমন তাস, ডাইস ও হাউজি খেলা ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। পরে ক্লাবগুলোর আবেদনে আপিল বিভাগ ওইবছরের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন।
হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি সম্পন্ন হয় গত ২৩ জানুয়ারি। এরপর ২৮ জানুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওইদিন রায় ঘোষিত হয়নি। এ অবস্থায় আজ রায় ঘোষণা করেন আদালত। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। ১৩ ক্লাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

যে ১৩টি ক্লাবের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করা হয় সেগুলো হলো- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব (ঢাকা), লেডিস ক্লাব (ঢাকা), ক্যাডেট কলেজ ক্লাব (গুলশান-১), নারায়ণঞ্জ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।

ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট-১৮৬৭ অনুযায়ী জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে সরকারকে গণিকাবৃত্তি(পতিতাবৃত্তি) ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তখন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনে আদালত জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করেছেন।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই রায় দেখার পর তা নিয়ে ঢাকা ক্লাব কর্তৃডক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *