নিজস্ব প্রতিবেদক : সনাতন ধর্মলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আসছে দুর্গাপূজা। প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হয় এই শারদীয় উৎসব। তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে পূজা আয়োজন ও উদযাপনে মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নির্দেশনা। এমনকি বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনেও করা যাবে না কোনো শোভাযাত্রা।
বুধবার করোনা মহামারির মধ্যে দুর্গাপূজা উদযাপন সংক্রান্ত ২৬টি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। যা পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. এ বছর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে মহালয়া অনুষ্ঠান সীমিত আকারে আয়োজন করতে হবে। অনুষ্ঠান মানতে হবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি।
২. করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে পূজা উদযাপন ও বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গোটা বিশ্বই এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে বা মন্দিরে আগত ভক্ত-দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্তকরণের প্রযোজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে ভক্ত, দর্শনার্থী, পুরহিত সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে সবাইকে বাধ্যতামূলক শতভাগ মাস্ক পরিধান করতে হবে। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৫. এসব স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের জন্য এবার অতীতের তুলনায় অধিক সংখ্যক কার্ড বা ব্যান্ডধারী নিজস্ব নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে।
৬. পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে আগত নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭. পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে আগত কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও দেহ তল্লাশি করতে হবে। এ জন্য দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী দর্শনার্থীর দেহ নারী স্বেচ্ছাসেবক ও পুরুষ দর্শনার্থীর দেহ পুরুষ স্বেচ্ছাসেবককে দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. আর্থিক সঙ্গতির ওপর ভিত্তি করে পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে সিসি ক্যামেরার দ্বারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. এবার পূজা উপলক্ষে কোনো ধরনের আতশবাজি বা পটকা বাজি ফুটনো যাবে না। এসব কার্যক্রম থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
১০. পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে শুধু ভক্তিমূলক সংগীত বাজানো যাবে। এছাড়া অন্য কোনো ধরনের সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১. উচ্চ শব্দের কারণে যাতে জনসাধারণের বিরক্তির সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে মাইক বা পিএ সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে ঢাক, ঢোল, কাসাসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো যেহেতু পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ, তাই সেগুলো বাজানো যাবে।
১২. এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না, যা দ্বারা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।
১৩. পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে জনসমাগমের কারণে কোনো অবস্থাতেই যাতে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি উপেক্ষিত না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে।
১৪. সন্ধ্যার পর যাতে দর্শনার্থীরা পূজা দেখতে না আসেন, এ জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
১৫. এবার পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে সকল প্রকার সাজসজ্জা, আরোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, মেলার আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৬. পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে যাতে অতিরিক্ত ভিড়ের সৃষ্টি না হয়, এ জন্য ভক্ত বা দর্শনার্থীরা দীর্ঘ সময় এক জায়গায় অবস্থান করা থেকে বিরত থাকবেন। পাশাপাশি ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
১৭. এ বছর সম্ভব হলে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে ভক্তদের বাসা-বাড়িতে অঞ্জলি নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে খুবই কম সংখ্যক ভক্তদের নিয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্দির বা মণ্ডপে অঞ্জলি নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে একাধিকবার অঞ্জলির ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. যেসব জায়গায় খোলা স্থানে অস্থায়ী প্যান্ডেল করে পূজার আয়োজন করা হয়, সেসব জায়গায় এবার সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করা যাবে কি না তা সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
১৯. পূজা আয়োজনে প্রতিটি মণ্ডপ বা মন্দিরে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।
২০. সকলকে পূজা মণ্ডপ বা মন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিত করতে হবে। প্রতিটি মণ্ডপের কর্তৃপক্ষকে সার্বক্ষণিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। মণ্ডপ বা মন্দির প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান স্থানে সংশ্লিষ্টদের মোবাইল নম্বর টানিয়ে রাখতে হবে। যাতে যেকোনো সমস্যা বা প্র্রয়োজনে যে কেউ দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে।
২১. পূজা মণ্ডপ বা মন্দির ও প্রতিমা বিসর্জনের স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিটি মন্দির বা মণ্ডপে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২২. পূজা মণ্ডপ বা মন্দির কেন্দ্রিক ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচন করতে হবে এবং তার বা তাদের মোবাইল নম্বর সংশ্লিষ্ট থানায় সরবরাহ করতে হবে।
২৩. কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় বা কেন্দ্রীয় কমিটির মনিটরিং সেলে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করতে হবে।
২৪. কোনো ধরনের গুজবে কান দেওয়া যাবে না। কোনো ধরনের গুজব ছড়ালে সেটি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।
২৫. এবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে কোনো শোভাযাত্রা করা যাবে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে এ বছর এটি পরিহার করতে হবে।
২৬. এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে এবং সুন্দর ও নির্বিঘ্নভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সকল স্তরের শাখা কমিটির আওতাধীন সকল মন্দির ও মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটিকে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিষদের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মহালয়া। এরপর আগামী ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজার মহাপঞ্চমী এবং ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে মহাষষ্ঠী। আগামী ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ বড় ধর্মীয় উৎসব। এবার দেবীর দোলায় (পালকি) আগমণ এবং গজে (হাতি) গমণ। সাধারণত মহালয়ার ৭দিন পর ষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হলেও এবার আশ্বিন মাস মালমাস হওয়ায় প্রায় এক মাস পর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।