সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খোকন, সম্পাদক মঞ্জুরুল হক

অনলাইন ডেস্ক :

 

সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কর্তৃত্ব ধরে রেখে সংখ্যাগরিষ্ঠ জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। সম্পাদক পদসহ ছয়টি সম্পাদকীয় ও চারটি সদস্য পদ নিয়ে ১০টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। আর সভাপতি ও তিনটি সদস্য পদ নিয়ে ৪টি পদে জয় পেয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। 

 

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আবু সাঈদ সাগরকে হারিয়ে এবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২ হাজার ৬২২টি। পরাজিত আবু সাঈদ সাগর পেয়েছেন, ২ হাজার ৫৩৯টি। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে হারিয়ে সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মঞ্জুরুল হক।তিনি ৩ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। কাজল পেয়েছেন ১ হাজার ৭০২ ভোট।  
 

অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন হলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা বরাবরই প্যানেলভিত্তিক পরিচিতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মনোনীত প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।

আর বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেলের সমর্থিত প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। 

প্রতি বছর সমিতির ১৪টি পদে নির্বাচন হয়ে থাকে। সভাপতি, সম্পাদক, দুটি সহসভাপতি, দুটি সহ-সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদ নিয়ে সম্পাদকীয় পদ ৭টি। বাকি ৭টি সদস্য পদ। সাদা-নীল দুই প্যানেলই বরাবরের মতো এবারও ১৪টি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে।

এ দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে দুজন, সম্পাদক পদে দুজন এবং কোষাধ্যক্ষ পদে একজন নির্বাচন করেছেন। এবারের নির্বাচনে মোট ৩৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। 

সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে দুটি সহসভাপতি পদে জয় পেয়েছেন, রমজান আলী শিকদার ও ড. দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন (সেতু)। কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদকের দুটি পদে জয় পেয়েছেন, মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (পল্লব)। আর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন- খালেদ মোশাররফ (রিপন), মো. বেলাল হোসেন শাহীন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।

 

নীল প্যানেল থেকে নির্বাচিত তিন সদস্য হলেন- সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম।

 

গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক নোটিশে সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের (২০২৪-২৫) তারিখ ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুসারে গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।

 

৭ মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে দুই দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বিঘ্ন ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন প্রার্থীরাও। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি জানায়, এবারের নির্বাচনে ৭ হাজার ৮৮৮টি ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এদিন রাতেই ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু ভোট যাচাই-বাছাইয়ের পর গণনা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় প্রার্থীদের মধ্যে। নিজেদের অ্যাজেন্ট না থাকার কথা উল্লেখ করে সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৮ মার্চ (শুক্রবার) দিনে ভোট গণনার দাবি তোলেন।

 

অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আরেক সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীসহ অনেক প্রার্থী রাতেই ভোট গণনার পক্ষে অবস্থান নেন। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে প্রার্থী, অ্যাজেন্ট-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটে। মারামারিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। এতে ভোট গণনা কার্যক্রম স্থগিত করে ব্যালট সিলগালা করে তা সমিতির মিলনায়তনে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। কিন্তু ভোট গণনা হলেও নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়েরকে সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

 

তবে শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বহিরাগত মাস্তানরা তাঁকে এ ঘোষণা দিতে বাধ্য করে। একে অর্থহীন ঘোষণা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা (ঘোষণা) ইগনোর করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’ পরে শনিবার বেলা পৌনে ৩টায় ভোট গণনা শুরু হয়। চলে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।

 

গত বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে সাদা-নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি-ভাঙচুরের মধ্যে পুলিশি হামলার ঘটনাও ঘটে। পুলিশের হামলায় আইনজীবীদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বিটের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জন না করলেও নীল প্যানেলের প্রার্থীরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ায়। গত বছর ১৫-১৬ মার্চ ভোট হয়। দ্বিতীয় দিনের একপেশে ভোটের পরদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ ফল প্রকাশ করে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি। নিরঙ্কুশ জয় পায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *