ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের হানা যে কারণে

অনলাইন ডেস্ক :

 

 

 

 

 

 

ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্রতর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। সাইক্লোন মৌসুমে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হানা দেওয়ার পেছনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

 

 

 

 

 

গত সপ্তাহে ভারতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় তাওতে। আরব সাগরের অস্বাভাবিক শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে অবশেষে শান্ত হয়। চলতি সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত আরেক শক্তিশালী ঝড় ইয়াসের কারণে ভারতে ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

 

 

 

কয়েক দশক ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতাও বেড়ে চলেছে। ফলে, নতুন ঘূর্ণিঝড় উদ্ভূত হওয়ার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি দুর্বল ঝড়গুলোও দ্রুত প্রবল রূপ ধারণ করছে। ফলে, তা দেশের জন্যও ডেকে আনছে ভয়াবহ পরিণতি।

 

 

 

 

 

উষ্ণ পানিতে সাইক্লোনের শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভারত মহাসাগরের অংশ হিসেবে আরব সাগরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকার কথা। ১৮৯১ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এখানে ৯৩টি ঘূর্ণিঝড় সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পূর্ব ভারতীয় মহাসাগরে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা স্থায়ীভাবেই ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। একই সময়কালে, বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ৩৫০টি।

 

 

 

 

 

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ফলে ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আরব সাগরে মাত্র ২০ বছরের পরিক্রমায় ২৮টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে, প্রবল হতে থাকে এসব ঝড়ের তীব্রতা।

 

 

 

 

 

২০১৬ সালে ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে আরব সাগরে ঘন ঘন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

 

 

 

 

ভারতের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ট্রপিকাল মেটিওরোলজির আবহাওয়া বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেন, আটলান্টিক কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত মহাসাগরের মধ্যে সমুদ্রের পশ্চিমাঞ্চল দিন দিন আরও বেশি উষ্ণ হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সমুদ্রে বিশেষত আরব সাগরে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও পুনরাবৃত্তির হার এবং একই সাথে ঝড়ের দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

 

 

 

 

 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়গুলোকে দ্রুততম সময়ে দুর্বল ঝড় থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু, বর্তমান পূর্বাভাস ব্যবস্থা আগে থেকেই দ্রুততম সময়ে ঝড়ের তীব্রতা লাভের বিষয়টি ধরতে পারে না। আর তাই কোলের মতে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষ উভয়ের পক্ষেই দুর্যোগ প্রতিরোধে সময়ানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এক কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

‌‘জলবায়ু পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরব সাগরে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত গতিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে, সেখানে আরও ভয়াবহ সব শক্তিশালী সাইক্লোনের সৃষ্টি হবে,’ বলেন তিনি।

 

 

 

 

 

 

ফলে, মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। ভারতে ১৩০ কোটি জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ শতাংশই উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে।

 

 

 

 

 

 

অন্যদিকে, ২০৬০ সালের মধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১০ মিটার উচ্চতার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

ভারতীয় পরামর্শক সংস্থা কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারের প্রকল্প প্রধান অবিনাশ মোহান্তি বলেন, ‘বিধ্বংসী পদচিহ্ন রেখে যাওয়া সাইক্লোন তাওতে তীব্র জলবায়ু বিপর্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভারতের জন্য এক চরম সতর্কবার্তা।’

 

 

 

 

 

 

 

জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো উন্নত করার পেছনে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন মোহান্তি। বিপর্যয়ের সার্বিক প্রভাব, জলবায়ু ঝুঁকির বিশদ মূল্যায়ন এবং জলবায়ু সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণের সমন্বয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

 

 

 

 

তবে, শুধু উপকূলীয় অঞ্চলই নয়, নেপালের মতো ভূবেষ্টিত দেশও ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় থেকে সুরক্ষিত নয় বলে মন্তব্য করেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভলপমেন্টের জলবায়ু বিজ্ঞানী অরুণ শ্রেষ্ঠা। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পরেও ঘূর্ণিঝড় শান্ত না হলে হিমালয় প্রান্তের উঁচু ভূমিতেও অতিরিক্ত তুষারপাত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

 

 

 

 

‘হিমালয় পর্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী কয়েকটি ঝড়ের মধ্যে আছে ১৯৯৫ সালের এভারেস্টের প্রবল তুষারঝড়, ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড় পাইলিন এবং ২০১৪ সালে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হুদুহুদ,’ বলেন তিনি।

 

 

 

 

 

 

 

এ ছাড়া, পঙ্গপাল ঝাঁকের আক্রমণ, আফ্রিকার বন্যা, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল এবং বৈশ্বিক বৃষ্টিপাতের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ও ভারত মহাসাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত।

সূত্র: টিবিএস নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *