জুয়েলারি শিল্পে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতের ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক :

 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের জুয়েলারি শিল্পে নতুন নতুন কারখানা স্থাপনে যৌথভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন-এ খাতে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।

 

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেছেন, বাংলাদেশের আছে দক্ষ স্বর্ণ শিল্পী আর ভারতের আছে দক্ষ ডিজাইনার। দুই দেশের এই দুই ধরনের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যৌথভাবে মার্কেটিং করতে পারব। প্রতিবেশী দুই দেশ সম্মিলিতভাবে কাজ করলে, বিশ্বে জুয়েলারি শিল্পে সবার উপরে থাকবো। আমাদেরকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

 

গত ২৮ জুন ভারতের গোয়া’য় হোটেল দ্যা লিলা’য় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক জুয়েলারি এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।

 

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়ে বাজুস বলেছে, ওই অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন গোয়া’র মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত।

 

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাবরিনা সোবহান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাজুস সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফরেন ট্রেড এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্টেসের চেয়ারম্যান বাদল চন্দ্র রায়, ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক মেলার আহ্বায়ক হাসমুখ পারেক ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রান্তি নাগভেকার।

 

এর আগে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর উপস্থিত অতিথিদের নিয়ে মেলার প্রবেশমুখে ফিতা কাটেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জুয়েলারি শিল্পে ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। এই বৈঠক গুলোতে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পে গহনা তৈরির নতুন কারখানা স্থাপনে যৌথভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।

 

তারা বাংলাদেশি কারিগরদের প্রশংসা করে বলেন, হাতে তৈরি গহনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরা কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসতে চান।

 

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, জুয়েলারি খাতে বাংলাদেশ থেকে ভারত অনেক এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এখন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার অনুরোধ ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুক। ভারতের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ভারত একসাথে কাজ করলে উভয় দেশের ব্যবসায় উন্নতি ঘটবে। ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা আমাদের ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করতে পারব।

 

বাজুস প্রেসিডেন্ট ভারতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপনারা যৌথভাবে কারখানা স্থাপন করুন। বাজুস সদস্য নয়, এমন কোন জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে আপনাদের ব্যবসার সাথে যুক্ত করবেন না। বাংলাদেশের অনেক জুয়েলারি ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাজুসের সদস্য না হয়ে, এই ব্যবসার সুনাম ক্ষুন্ন করছে, তাদের সাথে যৌথভাবে কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা পরিচালনা করবেন না।

 

সায়েম সোবহান আনভীর আরও বলেন, ‘সোনার বাংলা’ এর মতো মেলার আয়োজন আপনারা যখনই করবেন, আমরা তখনই আপনাদের আহ্বানে সারা দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করব, ঠিক অনুরূপভাবে আমরা যখন এ ধরনের মেলার আয়োজন করব, তখন আপনারা অবশ্যই অংশগ্রহণ করবেন। কেএনসি আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। কেএনসির আতিথেয়তায় এক ধরনের আবেগ অনুভূতি ছিল যা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

 

ওই অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় গোয়া’র মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত বলেন, রাষ্ট্রীয় জরুরি কাজ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করছি। গোয়া’য় আসার জন্য বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। আমরা বাংলাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কারিগরি সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ভারত- বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নত হোক।

 

বাজুস সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফরেন ট্রেড এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্টেসের চেয়ারম্যান বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ ভাই ভাই, আমরা একে অন্যের কাজে সহযোগিতা করবো। বর্তমানে বাংলাদেশের ভিশন ম্যানুফ্যাকচারিং। আর এ লক্ষ্য অর্জনে ভারতকে বাংলাদেশের পাশে চাই। বাংলাদেশের জুয়েলারি ব্যবসা দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের জিডিপিতে জুয়েলারি খাত অবদান রাখছে। বাংলাদেশের জিডিপি যেটুকু উন্নতি করছে তার পিছনে জুয়েলারি ব্যবসা সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

 

কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রান্তি নাগভেকার বলেন, আমাদের আমন্ত্রণে সারা দিয়ে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর ‘সোনার বাংলা’ জুয়েলারি মেলায় অংশগ্রহণ করায় কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের ভিশন এখন জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারিং। এ জন্য দরকার কারিগরি সহযোগিতা। কেএনসি ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাজে বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। দুই দেশের উদ্দেশ্য যাতে অর্জিত হয় কেএনসি সার্ভিসেস সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

 

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া জুয়েলারি এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে ২৯ জুন মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ক্রেস্ট প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। দুই দিনের এই মেলায় মোট ৩৫টি স্টলে গোল্ড ও ডায়মন্ড জুয়েলারি প্রদর্শিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দর্শনার্থী হিসেবে মেলায় অংশগ্রহণ করেন। এ মেলার মাধ্যমে নিত্য নতুন ডিজাইনের অলংকারের সাথে পরিচিতি ঘটেছে এবং অনেক জুয়েলারি ব্যবসায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত হয়েছে। এর ফলে দেশীয় জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে স্বর্ণালংকার রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হবে এবং আমাদের জিডিপি সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

একই দিন বিকালে গোয়া’র মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। এ সময়ে বাজুস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে গোয়া’র মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের সহযোগিতা কামনা করেন। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *