হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর সেমিতে আর্জেন্টিনা

অনলাইন ডেস্ক :

 

কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় অপ্রতিরোধ্য নেদারল্যান্ডস ও লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (০৭ ডিসেম্বর) রাত ১টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দুই দলের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই শুরু হয়। 

 

জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। আর হেরে গেলে বিদায় কনফার্ম। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে সর্বোচ্চ উজার করে দিলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির সহায়তায় গোল দেন মোলিনা। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ঠান্ডা মাথার পেনাল্টি থেকে গোল করে দলের সেমিফাইনালের পথ সুগম করে দেন মেসি।

 

কিন্তু ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও নেদারল্যান্ডস ২ গোল শোধ করে দেওয়ায় খেলা গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। জোড়া গোল করে নেদারল্যান্ডকে সমতায় ফেরায় উট উইঘোর্স্ট। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় কোনও দলই গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করার জন্য টাইব্রেকারের শরণাপন্ন হতে হয়। সেখানেই জিতে শেষ আটে নিজেদের নাম লেখালো আর্জেন্টিনা।

 

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু’দল। ম্যাচের ৯ মিনিটে বাম দিক থেকে আক্রমণে যায় নেদারল্যান্ড। তবে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ১০ মিনিটে আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। তবে আকুনার বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেনি কেউ। এরপর ম্যাচের ১৩ মিনিটে ডি পলের বাড়ানো বল সহজে নিজের গ্লাভসে নেন ডাচ গোলরক্ষক অ্যান্ড্র নোপার্ট।

 

ম্যাচের ১৬ মিনিটে গোছানো আক্রমণে যায় নেদারল্যান্ড। ডান দিক থেকে বাড়ানো বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে গোল পাওয়া হয় না ডাচদের। ম্যাচের ১৮ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয় স্টিভেন বার্গউইন। ম্যাচের ২১ মিনিটে কর্নার আদায় করে নেদারল্যান্ড। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

 

ম্যাচের ২২ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন মেসি। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ম্যাচের ২৪ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ পায় নেদারল্যান্ড। ডি বক্সের ভেতর থেকে ডিপাইয়ের নেওয়া শট চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ২৯ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস বাড়ান গ্যাকপো। তবে তা ক্লিয়ার করে দেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা।

 

ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ডি পল। তবে তা আটকে দেন অ্যান্ড্র নোপার্ট। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। মেসির পাস থেকে বল জালে জড়ান নাহুয়েল মলিনা। তার গোলে ম্যাচে প্রথমবারের মতো লিড পায় আর্জেন্টিনা। এই গোলের মধ্য দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের দেখা পান মলিনা।

 

ম্যাচের ৪০ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন মেসি। তবে তা টকে দেন অ্যান্ড্র নোপার্ট। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ফ্রি কিক পায় নেদারল্যান্ড। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এরপর আর কোন গোল না হলে এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

 

বিরতি থেকে ফিরে প্রথম আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে কর্নার পায় তারা। তবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ায় গ্যাকপো। তবে তা সহজেই নিয়ের গ্লাভসে নেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে অ্যাটাকে যায় ডাচরা। তবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

 

ম্যাচের ৫৯ মিনিটে কাউন্টার অ্যাতাকে যায় আর্জেন্টিনা। তবে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৬১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেই ফ্রি কিক থেকে মেসির নেওয়া শট অল্পের জন্য চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।

 

ম্যাচের ৭১ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর আকুনাকে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেটিনার লিড বাড়িয়ে দেন মেসি। তার গোলে ম্যাচে ২-০ তে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

 

ম্যাচের ৭৯ মিনিটে নেদারল্যান্ড আক্রমণে গেলেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৮১ মিনিটে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে সেখান থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা।  ম্যাচের ৮২ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে ফ্রি কিক পায় ডাচরা। তবে তা ক্লিয়ার করে দেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে গোলের দেখা পায় নেদারল্যান্ড। ডান দিক থেকে বাড়ানো বলে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান উট উইঘোর্স্ট।

 

ম্যাচের ৮৫ মিনিটে আবারও শট করেন উট উইঘোর্স্ট। তবে তা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে ফ্রি কিক পায় নেদারল্যান্ড। তবে কাজে লাগতে পারেনি তারা। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় নেদারল্যান্ড। তবে সেখান থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় ডাচরা। অতিরিক্ত সময়ের শেষ সময়ে ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বলে গোল করে ডাচদের সমতায় ফেরায় উট উইঘোর্স্ট। ফলে শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচটি।

 

অতিরিক্ত সময়ের খেলার শুরুতেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। ম্যাচের ১০০ মিনিটে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ১০৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয় ওটামেন্ডি। এরপর আর কোন গোল না হলে সমতায় অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ করে দু’দল।

 

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে শুরুতেই ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১০৬ মিনিটে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ১০৯ মিনিটে ডান দিক থেকে আবারও ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেখান শট ফ্রি কিক নিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন মেসি। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।

 

ম্যাচের ১১২ মিনিটে ফ্রি কিক পায় ডাচরা। ম্যাচের ১১৪ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে মার্টিনেজের নেওয়া শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর ম্যাচের ১১৫ মিনিটে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে পাওয়া বলে এঞ্জো ফার্নান্দেজ শট করলে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচটি।

 

টাইব্রেকারে ভ্যান ডাইকের নেওয়া শট রুখে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শটে গোল করেন মেসি। ডাচদের পক্ষে স্টিভেন বার্গাসের নেওয়া দ্বিতীয় শটও রুখে দেন মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার পক্ষে দ্বিতীয় শটে গোল করেন পারাদেস। এরপর ডাচদের পক্ষে তৃতীয় শটে গোল করেন টিন কুপমিনার। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে তৃতীয় শটে গোল করেন মন্টিয়েল।

 

ডাচদের পক্ষে চতুর্থ শটে গোল করেন জাস্টিন বিজলো। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পক্ষে চতুর্থ শটে গোল করতে ব্যর্থ হন এঞ্জো ফার্নান্দেজ। এরপর ডাচদের পক্ষে পঞ্চম শটে গোল করেন লুক ডি জং। এরপর আর্জেন্টিয়ার পক্ষে পঞ্চম শটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন লাওতারো মার্টিনেজ। এই জয়ের ফলে সেমিগফাইনালে পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনা। আর হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় নেদারল্যান্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *