ইন্টারনেট চলবে আলো দিয়ে

অনলাইন ডেস্ক : যখন এই আলোগুলো চালু হয়, তখন শুধু ঘরটিই উজ্জ্বল হয় না, তথ্যও প্রচার হয়। বার্লিনের ফ্রাউনহফার হাইনরিশ হারৎস ইন্সটিটিউটের এই গবেষকরা আলো ব্যবহার করে তারহীন তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রযুক্তি ‘লাইফাই’ নামে পরিচিত। ইংরেজি ‘লাইট ফেডালিটি’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ এটি।

এলইডি ল্যাম্পের মাধ্যমে কাজ করে লাইফাই। এলইডি বাতি অত্যন্ত দ্রুত বন্ধ ও চালু করা যায়। রিসিভার ডিভাইসে থাকা সেন্সরগুলো সিগন্যাল গ্রহণ করে। সিগন্যাল ট্রান্সমিটারের গতিও অনেক। লাইফাই অত্যন্ত বিস্তৃত স্পেকট্রাম ব্যবহার করে যা ইতিবাচক ব্যাপার। আমাদের সিলিং লাইট থেকে তারহীন প্রযুক্তিতে তথ্যও দ্রুত সরবরাহ করা যায়৷ কিন্তু এটা কি আমাদের দৃষ্টিশক্তির জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?

ফ্রাউনহফার হাইনরিশ হারৎস ইন্সটিটিউটের আনাগ্নোস্টিস পারাস্কেভোপিওস বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি সারাক্ষণ মিটমিট করে জ্বলে? উত্তর হচ্ছে না, যা এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে খুব চমৎকার সামঞ্জস্য আনা হয়েছে। সেটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে চোখের পক্ষে সনাক্ত করা সম্ভব না হয়৷

এখানে জ্বলতে থাকা সবুজ আলোগুলো শুধু ডিজাইন উপকরণ হিসেবে কাজ করছে। বার্লিনের বিজ্ঞানীরা এই ডিভাইসগুলো সম্প্রতি তৈরি করেছেন। সবুজ আলো দেখলে বোঝা যায় যে এগুলো কাজ করছে। এই অপটিক্যাল তারহীন ব্যবস্থা কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হচ্ছে- তথ্যে প্রেরণ আর গ্রহণ করার যন্ত্রের মধ্যে ভিজ্যুয়াল সংযোগ থাকতে হবে। আলোর সূত্র যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সিগন্যাল পাওয়া যাবে না। তথ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

উনহফার হাইনরিশ হারৎস ইন্সটিটিউটের আনাগ্নোস্টিস পারাস্কেভোপিওস বলেন, অপটিক্যাল ডেটা কানেকশনের একটি সুবিধা হচ্ছে এটাকে সহজেই এক ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। এজন্য আমার শুধু জানালার পর্দা নামিয়ে ফেলতে হবে। আর তখন এই ব্যবস্থায় সরবরাহ করা সব তথ্য ঘরের মধ্যেই থেকে যাবে। রেডিও লিংকের সঙ্গে তুলনা করলে এটা একটা বড় সুবিধা। কারণ অন্য ব্যবস্থায় ঘরের বাইরে থাকা ডিভাইসও একই তথ্য গ্রহণ করার সুযোগ থেকে যায়।

তথ্য সরবরাহের এই ব্যবস্থায় বাইরে থেকে বিঘ্ন ঘটানোও সম্ভব নয়। আলোভিত্তিক এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন এই প্রযুক্তির রিসিভার হচ্ছে এই বাক্সটি।

পাশাপাশি অন্যান্য লাইফাই ডিভাইসগুলোকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে সেগুলোর অন্তত একটি সবসময় রিসিভারের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকে। ফলে রোবটটি সার্বক্ষণিক নড়াচড়ার মধ্যে থাকলেও তথ্য সরবরাহ কোনো বিঘ্ন ঘটছে না। আর এই প্রকল্পের জন্য এটা এক বড় সাফল্য।

আনাগ্নোস্টিস বলেন, আমার মত হচ্ছে, এই প্রযুক্তি প্রথমে একটি শিল্পখাতে প্রয়োগ করা উচিত। কেননা সেখানেই এটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা পূরণ করতে পারি এবং একইসঙ্গে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আরো সুযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে আলোর মাধ্যমে তথ্য সরবরাহের এই ব্যবস্থা আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্মেও ব্যবহার করা যাবে। যেমন মিউজিয়াম এবং গণপরিবহনে এটা কাজে লাগতে পারে। বিশেষ করে এমন পরিবেশে যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ রয়েছে কিংবা যেখানে সাধারণ তারহীন প্রযুক্তি ব্যবহারে জটিলতা রয়েছে। তবে, সেসবের আগে বেশি কিছু সমস্যাও সমাধান করতে হবে।

গবেষকরা আগামী তিন বছরের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধানের আশা করছেন। আর তখন নিত্যদিনে ব্যবহার করা যাবে লাইফাই।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *