অনলাইন ডেস্ক :
প্রতিটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ক্রেতাদের কাছে তাদের ব্র্যান্ডটি পৌঁছে দেওয়া, যাতে তাদের পণ্য ও সেবা কিনতে আগ্রহী হয় ক্রেতারা। এ জন্য ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়া খুবই কার্যকর একটি মাধ্যম, কিন্তু সঠিক দর্শকের সামনে বিজ্ঞাপন না পৌঁছালে বিজ্ঞাপন থেকে ক্রেতা আকর্ষণ করা খুবই কঠিন। আবার যাঁরা কনটেন্ট তৈরি করেন, তাঁদের কনটেন্টের পাঠক বা দর্শকরা কী চায় সে অনুযায়ী সঠিক স্পন্সর বা বিজ্ঞাপনদাতা খুঁজে বের করাও কঠিন।
যেভাবে বুঝবেন কনটেন্টের মূল্য
গুগল অ্যাডসেন্স পার্টনার হয়ে ওয়েবসাইট বা চ্যানেল যুক্ত করার পর গুগল সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাবে বেশ কিছু সংখ্যা—তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কস্ট পার ক্লিক (সিপিসি) এবং রেট পার মাইল (আরপিএম)। সিপিসি নির্দেশ করে, ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটরপ্রতি কত টাকা করে পাবলিশারকে দিচ্ছে গুগল। এটা নির্ভর করে পুরোটাই কী পরিমাণ ভিজিটর হাজির হচ্ছে এবং ভিজিটরদের ডেমোগ্রাফিক ও সাইটের কনটেন্টের বিষয়বস্তুর ওপর।
এ ছাড়া ক্লিক থ্রু রেটের (সিটিআর) মাধ্যমে বোঝানো হয় কতবার ভিজিটর সাইটে ক্লিক করলে বা পেজ ভিজিট করলে একবার অ্যাডটি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছায়। তবে এটি সাইটের লে-আউট ঠিকঠাক করার জন্য বেশি কাজে লাগে, কত টাকা আয় হতে পারে সেটার নির্দেশনা নয়।
করণীয়
সিপিসি ও আরপিএম বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন—
কনটেন্টের ধরন বাছাই করা
সব কনটেন্টে সমানভাবে বিজ্ঞাপনের বাজেট পাওয়া যায় না। খাবার নিয়ে কাজ করলে যদিও ভিউ বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু সেটার বদলে ব্যাংকিং বা ইনস্যুরেন্স নিয়ে কাজ করলে উচ্চমানের ভিউয়ার ডেমোগ্রাফিককে সাইটে টানা সম্ভব, যাদের সিপিসি ও আরপিএম দুটিই বেশি। কেননা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বাজেট থাকে অনেক বেশি। একইভাবে জমি বা ফ্ল্যাট, গাড়ি বা দামি গ্যাজেট নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করলেও সিপিসি ও আরপিএম দ্রুত বাড়ানো যায়।
ভিজিটের সময় বাড়ানো
ভিজিটর টানলেই হবে না, তারা যাতে সাইটে বেশি সময় ব্যয় করে, সেটার প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। আগে লম্বা কনটেন্ট তৈরি করেই কাজটি সেরে ফেলা গেলেও বর্তমানে লম্বা কনটেন্ট পড়তে বা ভিডিও দেখতেও রাজি নয় অনেকেই। তাই একাধিক মাঝারি আকারের কনটেন্ট তৈরি করা, সাইটের এক কনটেন্ট থেকে অন্য কনটেন্টে যাওয়ার জন্য সহজ ইন্টারফেস তৈরি করা এবং সম্পর্কিত কনটেন্টের ট্যাগ ক্লাউড বা ফিড রাখা খুবই জরুরি। হেডলাইন, ফিচার ইমেজ এবং মেটা-টেক্সটই দিনশেষে ভিউয়ারদের ধরে রাখে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
অটো-অ্যাড অপশনটি চালু রাখা
নতুন ওয়েব পাবলিশারদের কাছে নিজ হাতে বসে বসে প্রতি পাতায় অ্যাড বসানো অনেক কঠিন মনে হতে পারে, তাই গুগল অ্যাডসেন্স ড্যাশবোর্ড থেকে অটো অ্যাড অপশনটি চালু করে দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে গুগল কোন পাতায় কী ধরনের অ্যাড কোন জায়গায় বসানো উচিত, সে অনুযায়ী ভিজিটরদের বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় অপ্রীতিকর অ্যাডও সামনে চলে আসতে পারে, তাই অ্যাডওয়ার্ড থেকে আগেই সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া শ্রেয়। তবে অ্যাড অপটিমাইজেশন চালু না করাই ভালো, কেননা সেটি আবার পেজে নিজ থেকে বসানো অ্যাড উল্টাপাল্টা করে দিতে পারে বা সরিয়েও ফেলতে পারে। তাই শুরুতে অপটিমাইজেশন অন করলেও নিজ থেকে অ্যাড বসানো শুরু করলে সেটা বন্ধ করে দিতে হবে।
সম্পর্কিত কনটেন্ট দেখানোর ব্যবস্থা রাখা
শুধু বিজ্ঞাপনই নয়, গুগল চাইলে ওয়েবসাইটের ধরন অনুযায়ী অন্যান্য উচ্চ ভ্যালু কনটেন্টও দেখাতে পারে, যেটাকে তারা বলে সাজেস্টেড কনটেন্ট।
প্রতিটি পেজের শেষে আটটি বা ১০টি সম্পর্কিত কনটেন্ট নিজ থেকেই দেখানোর সিস্টেম চালু করলে সিপিসি ও আরপিএম তো বাড়বেই, ক্লিকব্যাক ও ওয়েবসাইট র্যাংকিং ওঠাতেও কাজে লাগবে।
সাইটের হেডারে বিজ্ঞাপন ব্যানার বসানো
পত্রিকার হেডলাইনে যেমন সবাই প্রথম নজর দেয়, ওয়েবসাইটের হেডারও তেমন সবার চোখে পড়ে প্রথমেই। তাই সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি বাজেট রাখে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে হেডারে অ্যাড দিয়ে রাখলে মূল বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি হেডারে সেটা স্থান দেওয়ার জন্য রাখা বাড়তি বাজেটেরও কিছু অংশ পাওয়া যাবে, ফলে দ্রুত বাড়বে সিপিসি ও আরপিএম।
কোনো বিজ্ঞাপনই ফেলনা নয়
অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, কম বাজেটের অ্যাড বন্ধ করে রাখাই উত্তম। এটা করা উচিত নয়, কেননা আজ যার বাজেট কম কাল তার বাজেট বাড়বে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই অথচ সেই বিজ্ঞাপনদাতাকে একবার ব্লক করলে পরে সেটা চালু করার কথা মনে না-ও থাকতে পারে। এর বদলে উচ্চমানের কনটেন্ট সাইটে পাবলিশ করলে নিজ থেকেই গুগল উচ্চ বাজেটের বিজ্ঞাপন আরো বেশি করে দেখানো শুরু করবে। নিজের সাইটের মান বাড়ানোই শ্রেয়, কম দামি বিজ্ঞাপন বন্ধ নয়।
মাল্টিপ্লেক্স অ্যাড চালু রাখা
সাজেস্টেড কনটেন্টের মতোই সাইটের নিচে আট থেকে ১০টি বক্সে সম্পর্কিত পোস্টের মতো বিজ্ঞাপনও দেখানো যেতে পরে, যেটায় ভিজিটররা সাধারণত ক্লিক বেশি করে থাকে। এই বিজ্ঞাপনটির নাম মাল্টিপ্লেক্স অ্যাড, এটা সাইটের সিপিসি ও আরপিএম খুব দ্রুত বাড়াতে কার্যকর, আবার ব্যবহারকারীরাও বিরক্ত হবে না।
সাইটের লোডিং টাইম কমানো
ওয়েবসাইট যত ধীরে লোড হবে, ভিজিটর ততই কম আসবে। এর প্রভাবে সিপিসি ও আরপিএম দ্রুত কমে যেতে থাকবে, তাই সাইটের লোডিং টাইম যত কমানো যায় ততই মঙ্গল। ক্লাউডফ্লেয়ার ক্যাশিং, ভালো রাউটিং, ওয়ার্ডপ্রেসে হালকা ও রেসপন্সিভ থিম ব্যবহার এবং ভালো মানের হোস্টিং ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
ল্যান্ডিং পেজ ব্যবহার করা
একই ধরনের কনটেন্ট একত্র করে সে বিষয়ের ওপর বিশেষায়িত ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করলে সেটা এসইও দ্রুত হয়ে যাবে। ফলে সে বিষয় কেউ গুগল সার্চ করলে ল্যান্ডিং পেজটি আগে দেখাবে, পরে সেখান থেকে মূল সাইটে যদি ভিউয়ার আসে, তাহলে ওয়েবসাইটটির আরপিএম ও সিপিসি বাড়বে দ্রুত। ল্যান্ডিং পেজ একাধিক বিষয়ের ওপর তৈরি করলে খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো যাতে সম্পর্কিত থাকে, একেবারে আলাদা যেন না হয়।
কনটেন্টে হুক তৈরি করা
ভিডিওর শুরুতেই অনেকে শেষের কিছু অংশ দেখিয়ে দেয়। অথবা লেখার শুরুতে কোনো চমকে দেওয়ার মতো বিষয়ের কিছুটা লেখে, পরে সেটা একেবারে শেষে পাঠককে জানানো হয়। এমন ধরনের স্ট্র্যাটেজিকে বলা হয় কনটেন্টে হুক তৈরি করা। এতে পাঠক একেবারে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রেখে সেটা পড়ে এবং গুগল আরো বেশি বিজ্ঞাপন তার সামনে দেখাতে পারে।
জানার আছে আরো অনেক কিছু
নজরকাড়া লোগো, ট্যাগলাইনে এসইও শব্দের ব্যবহার, সঠিক ফন্ট বাছাই, সময়মতো কনটেন্ট আপলোড, ভিডিও ও ছবির কনটেন্টে জোর দেওয়া, বিশেষ ক্ষেত্রে বুস্টিং করা—অ্যাডসেন্স থেকে আয় বাড়াতে এমন নানা উপায়ে নিজের সাইটকে আরো শক্তিশালী করা যেতে পারে। তাই প্রতিনিয়ত এ বিষয় অনুশীলন করার বিকল্প নেই।