ন্যাশনাল ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে দেড় লক্ষ্যাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। মারা যাচ্ছেন সিলেটেরও অনেক মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত কিছুদিন ধরে একের এক এক সিলেটির মৃত্যুর খবর আসছে।
জানা গেছে, করোনায় এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলার অন্তত ৪১ জন মানুষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, করোনাক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি সিলেটি মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ সিলেটি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ সিলেটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা।
তথ্যানুসারে, গেল ১৩ মার্চ সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাগিরঘাটের আফরোজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০ মার্চ মৌলভীবাজারের মাহমুদুর রহমান মারা যান লন্ডনে। ২৩ মার্চ সিলেটের বিয়ানীবাজারের ছনগ্রামের জামসেদ আলী, ২৪ মার্চ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাহারপাড়ার খসরু মিয়া করোনাক্রান্ত হয়ে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
গত ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলগাঁও ইউনিয়নের পংকি মিয়া, ২৯ মার্চ দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দির সোহেল আহমদ, ৩০ মার্চ দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের খাজাখালু গ্রামের মদরিস আলী যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে ৪ সিলেটি মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। তন্মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জের রনকেলী দক্ষিণভাগের মোদাব্বির চৌধুরী ইছমত এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মিনহাজপুরের আজিজুর রহমান নিউইয়র্কে মারা যান। এছাড়া দেশটির মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটিতে গোলাপগঞ্জের শামসুল হুদা চৌধুরী এবং নিউজার্সিতে এক সিলেটি নারীর প্রাণ যা।
ওই একই দিন (৩০ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকার হিলসাইডে নিশাত আফছা চৌধুরী নামের এক তরুণী মারা যান করোনার ছোবলে। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের করের গ্রামে। পরদিন ৩১ মার্চ সিলেট নগরীর পীরমহল্লার এক যুবক মারা যান লন্ডনে।
আরও জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে করোনায় প্রাণ হারান দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ভাংগী গ্রামের দিবলু আহমদ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার প্রাণ যায়। লুটনে পরিবারসহ বসবাস করতেন তিনি। দিবলুর মৃত্যুর পর চলে যান তার মা বেদানা বেগমও। গত ৪ এপ্রিল বেদানা বেগম করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ওই একই দিন (১ এপ্রিল) যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুফতির গাঁওয়ের তোয়াহিদ আলী। যুক্তরাজ্যের ফরেস্ট হিলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট নগরীর অরূপ শ্যাম বাপ্পার স্ত্রী কবিতা সেনগুপ্ত।
জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল লন্ডনে করোনাভাইরাস কেড়ে নেয় সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা গ্রামের দিলাল আহমদের প্রাণ। ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান বিয়ানীবাজারের লাউতা গ্রামের কামাল আহমেদ। সেখানকার এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কামাল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।
এদিকে, সিলেটের এক শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের মা গত ৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে করোনায় প্রাণ হারান। পরে তার বাবাও করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান গত ১০ এপ্রিল। এছাড়া তার চাচী গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে লন্ডনে মারা যান করোনায়।
এছাড়া ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের পেটার্সনের বাসিন্দা হাফিজ রুবেল আহমদ প্রাণ হারান করোনায়। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের খর্দ্দাপাড়া গ্রামে। পরদিন ৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ শহরের মাস্টার্স কোয়ার্টারের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা অসমঞ্জ কুমার ধর করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। সেখানকার ওয়ারেন সিটির সেন্ট জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
একই দিন (৬ এপ্রিল) স্পেনের বার্সালোনায় প্রাণ হারান সুনামগঞ্জের ছাতকের আব্দুল শহীদ নামের এক ব্যক্তি। সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন তিনি। গত ৭ এপ্রিল সিলেটের গোলাপগঞ্জের বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বহরগ্রামের বদরুল হক প্রাণ হারান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে।
এদিকে, গত ৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান সুনামগঞ্জের ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের ছনখাইড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ। নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের আইসিউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ওই একই দিন সিলেটের বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের গোলাম রাব্বানী যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে প্রাণ হারান করোনার ছোবলে। তিনি সপরিবারে বার্মিংহামে বসবাস করতেন।
৮ এপ্রিল মারা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের নূরগাঁওয়ের ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ফয়সাল। তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের রমর্ফোডের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই’র ব্যবস্থা করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।
গত ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়নের গিয়াস উদ্দিন প্রাণঘাতী করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রাণ হারান। একই দিন ছাতকের সিংচাপইড় ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামের আনসার আলী যুক্তরাজ্যের লন্ডনে মৃতুব্যরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে দেশটিতে বসবাস করছিলেন।
জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথের খাজাঞ্চী ইউনিয়নের জয়নগর নোয়াপাড়া গ্রামের জামাল আলী করোনাক্রান্ত হয়ে গত ১০ এপ্রিল কানাডার টরন্টোতে মারা যান।
গত ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে করোনাক্রান্ত ৫ সিলেটির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তারা হলেন- সিলেটের বিয়ানীবাজারের এনাম হোসেন, জকিগঞ্জের হাইদ্রাবন্দ গ্রামের আজিজুন্নেসা, সিলেট সদরের দেওয়ান আফজাল চৌধুরী, সিলেটের কানাইঘাটের রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের তালবাড়ি পূর্ব গ্রামের আলা উদ্দিন এবং সিলেটের ওসমানীনগরের খন্দকার মোসাদ্দেক আলী সাদেক।
গেল ১৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ পিটুয়া গ্রামের আব্দুল হক চৌধুরী যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। তিনি বার্মিংহাম শহরের বসবাস করতেন। তিনি বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ডের সাবেক কন্ট্রোলার ছিলেন।
এদিকে, গত ১৭ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে করোনা কেড়ে নেয় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের সদরুল হকের প্রাণ। লন্ডনের নিউহ্যাম জেনারেল হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত ১৯ এপ্রিল কানাডার টরন্টোতে মারা যান ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং বালাগঞ্জের দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের নশিওরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ শওকত আলী। কানাডার টরেন্টো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ইটাউড়ি গ্রামের সৈয়দ সরোয়ার হুসেন রানা যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি সে দেশের লুটন শহরে বসবাস করতেন এবং গেইটউইক বিমানবন্দরে এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।