নিজস্ব প্রতিবেদক :
আজ রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা। এ ধর্মীয় উৎসবটি কালীপূজা নামেও পরিচিত। একই সঙ্গে আজ উদযাপিত হবে শুভ দীপাবলি উৎসব। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, শ্যামা দেবী হলো শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের প্রতীক। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভক্তের জীবনে অবারিত কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে ধরাপৃষ্ঠে আগমন ঘটে দেবী শ্যামার।
আজ জননীরূপে বাঙালীর জীবনে আবির্ভাব ঘটবে মহাশক্তি ত্রিনয়নী মা শ্যামার। হিন্দু পুরাণ মতে, কালীদেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দটি থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয় মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম্য। কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যশক্তি। শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের তন্ত্রশাস্ত্র মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা।
তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশজন দেবীর মধ্যে প্রথম। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদিকারণ মনে করে। বাঙালী হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন-দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, মহাকালী, চামুণ্ড ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী, করুণাময়ী ইত্যাদি নামে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত ও পূজিত হয়। কালীপূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় আজ সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করবেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলি। দীপাবলি ভারতে ‘দিওয়ালি’ নামেও পরিচিত। অমাবস্যা রাতের সমস্ত অন্ধকার দূর করতে এই রাতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। যাতে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পায়।
আজ অমাবস্যা তিথিতে দিবাগত রাতে দেশব্যাপী উদযাপিত হবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি। সন্ধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে জ্বালানো হবে মঙ্গল প্রদীপ (দিওয়ালি)। বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গল কামনায় হিন্দু সম্প্রদায় জাঁকজমকভাবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উদযাপনে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সনাতন ধর্মগ্রন্থ পুরাণ মতে, অন্যায়-অত্যাচার দূর করতেই মা কালীর মর্ত্যে আগমন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের বার্তা দিতে আসেন দেবী। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে শ্যামাপূজা বা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। দীপাবলির সন্ধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গণ, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেজে ওঠে সারি সারি প্রদীপ আর মোমের স্নিগ্ধ আলোয়। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক দীপাবলি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাই শ্যামা দেবী শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামের প্রতীক। ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও সূত্রাপুরসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় মন্ডপে বেশ ঘটা করে শ্যামাপূজা হয়।
রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কালীপূজার আয়োজন রয়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে শ্যামাপূজা উদযাপিত হবে। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত ভক্তদের মাঝে।
দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। সন্ধ্যায় দেশ জাতির মঙ্গল কামনায় সহস্র প্রদীপ প্রজ্বালন করা হবে। রাত ১২টায় কালীপূজা শেষে অঞ্জলি দেবেন ভক্তরা।এসবের মধ্যে রয়েছে আলোকসজ্জা, ফানুস ওড়ানো, প্রদীপ প্রজ্বালন, ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, আরতি, প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি।