জয়ে সমতা ফেরালো বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক :

 

নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি হবে তো? জয় তখন একেবারেই নাগালে। তাওহীদ হৃদয় স্পিনার থিকসানার বলে ছক্কাটা না মারলে সমীকরণটা সহজ হতো শান্তর জন্য। কিন্তু তাওহীদের ছক্কায় জয়ের সমীকরণ নেমে আসে ১১ বলে ২ রান। শান্তর ফিফটি পেতে প্রয়োজন ৩ রান।

 

৪৭ রানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক নিজেকে অপেক্ষায় রাখলেন না। পরের ওভারে শানাকার প্রথম বল মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে পেয়ে গেলেন ছক্কা। তুলে নিলেন এ বছরের প্রথম ফিফটি। সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম জয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ উইকেটে জয়ে বাংলাদেশ তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরাল।

 

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। এবার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি। জবাবে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যায় অতি সহজে ১১ বল হাতে রেখে।

 

আগের ম্যাচে দুইশর বেশি রান করায় আত্মবিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের। সেই আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায় সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের দারুণ শুরুতে। পাওয়ার প্লে’তেই ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। দুই ওপেনার দশের ওপর রান তুলে ৬৩ রান পেয়ে যান। এজন্য ভাগ্যকেও পাশে পেয়েছে তারা। কেননা ‘আউট হয়েও’ আম্পায়ারের নট আউটের সিদ্ধান্তে জীবন পান সৌম্য।

 

বিনুরা ফার্নান্দোর শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ব্যর্থ হন সৌম্য। তার ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে বল যায় উইকেটের পেছনে। শ্রীলঙ্কার আবেদনে আম্পায়ার আউট দেন। কিন্তু সৌম্য রিভিউ নেন। আল্ট্রা এজে দেখা যায় বল যখন ব্যাটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন স্পাইক ছিল। কিন্তু টিভি আম্পায়ার বলেন, স্পাইক  আসার সময় ব্যাট ও বলের মধ্যে দূরত্ব ছিল। সেজন্য নট আউট দেন তাকে।

 

জীবন পেয়ে’ সৌম্য জ্বলে উঠলেও বড় কিছু করতে পারেননি। পাথিরানার শর্ট বলে ম্যাথুউজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২২ বলে ২৬ রান করেন ৫ বাউন্ডারিতে। সঙ্গী হারানোর পর লিটনও ফেরেন দ্রুত। সৌম্যর মতো শর্ট বলেই আউট ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ বলে ৩৬ রানে থেমে যায় তার ইনিংস।

লিটন যখন আউট হন বাংলাদেশের রান তখন ২ উইকেটে ৮৩। পরের ১১ ওভারে ৮৩ রান প্রয়োজন ছিল স্বাগতিকদের। তৃতীয় উইকেট জুটিতেই ওই রান চলে আসে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়ের জমাট জুটিতে বাংলাদেশ জয় পেয়ে যায় অতি সহজে। প্রতি আক্রমণে গিয়ে, প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে রান তোলেন দুই ব্যাটসম্যান। ৩৬ বলে তাদের জুটির রান পঞ্চাশ পৌঁছায়।

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ১১ বল আগে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান তারা। শানাকার বল ছক্কা উড়িয়ে শান্ত পেয়ে যান ফিফটি। দলকে উপহার দেন জয়। ৩৮ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। ৪টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা হাঁকান। তাওহীদ ২৫ বলে ৩২ রান করেন ২ চার ও ১ ছক্কায়। ৫৫ বলে তাদের জুটিতে আসে ৮৭ রান। দলকে জেতানোয় ম্যাচ সেরার পুরস্কারও বাংলাদেশের অধিনায়ক।

এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। শরিফুল প্রথম ওভার নেন  মেডেন। বাঁহাতি পেসারের বলে দর্শক হয়ে থাকা আভিশকা ফার্নান্দো দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের বলে উইকেট বিলিয়ে আসেন। তাসকিনের লেংথ বল অন সাইডে খেলার চেষ্টায় আভিশকার ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় ওপরে। ফিরতি ক্যাচ নেন তাসকিন। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে অতিথিরা। শুরুর বিপর্যয় সামলে পাওয়ার প্লে’তে কামিন্দু মেন্ডিস ও কুশল মেন্ডিস ৪৯ রান তুলে নেন। তাদের জুটির পঞ্চাশ রান তোলার পর দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে লঙ্কানদের স্কোরবোর্ড।

শান্ত পার্ট টাইম বোলার সৌম্যকে এনে ভাঙেন প্রতিরোধ। সৌম্যর ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারীতে অফসাইডে পাঞ্চ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কুশল। ২ চার ও ৩ ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন তিনি। এরপর দ্রুত আরো ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। থিতু হয়ে আক্রমণ চালানো কামিন্দু নতুন ব্যাটসম্যান সামারাবিক্রমার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান করেন কামিন্দু। এরপর মোস্তাফিজের সাদামাটা বলে ফিরতি ক্যাচ দেন সামারাবিক্রমা (৭)।

লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা উইকেটে গিয়ে ঝড় তোলা শুরু করেন। মাহেদীর এক ওভারেই দুটি ছক্কা মারেন লং অন ও লং অফ দিয়ে। তবে প্রতিশোধ নিতে সময় নেননি মাহেদি। উইকেটের বল জায়গা থেকে সরে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন আসালাঙ্কা। ১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪ বলে ২৮ রান করেন। সেখান থেকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দাসুন শানাকার ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা লড়াকু পুঁজি পায়। কোনো শুরু না দিয়ে তারা ৩৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রানের জুটি গড়েন। ২১ বলে ৩২ রান করেন ম্যাথুস। শানাকার ব্যাট থেকে ১৮ বলে আসে ২০ রান।

শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে না পারার কারণ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং। আগের ম্যাচে শেষ ৫ ওভারে বোলাররা দিয়েছিলেন ৭০ রান। আজ মাত্র ৪৩ রান। তাতেই ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নাগালে পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তাসকিন, মোস্তাফিজ, সৌম্য ও মাহেদি ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। শরিফুল ও রিশাদ উইকেট না পেলেও ব্যয়বহুল ছিলেন না।৯ মার্চ একই মাঠে হবে সিরিজের ফয়সালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *