কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ নির্ভেজাল ধার্মিক মানুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি।
হানিফ বলেন, লালন শাহের চিন্তা, চেতনা ও উন্নত দর্শন ছিল মানবতার জন্য, সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য। লালন শাহ ছিলেন মানবতাবাদী, সুফি সাধক। তিনি অসাধারণ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন।
রোববার (২৪ মার্চ) বিকেলে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহের একাডেমি মিলনায়তনে দিনব্যাপি লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এক সময় যে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, ধর্মের গোঁড়ামি ছিল, আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আবারও আমরা সেই সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যে সমাজের বিরুদ্ধে জাতির পিতা লড়াই করেছিলেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে বলেছিলেন— ধর্ম যার যার, আমরা মানুষ হবো সবার। সেই কথাগুলো লালনও বলেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের সঙ্গে লালনের দর্শনের অদ্ভুত মিল আমরা খুঁজে পাই। লালনের বাণী ও দর্শন সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। লালনের দর্শন ধারণ করে আমাদের সোনার মানুষ হতে হবে, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, আজকে আমাদের সমাজে চরম নৈতিকতার অবক্ষয়। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা নেই। মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও সততা আস্তে আস্তে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে।
হানিফ বলেন, সম্রাট ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে দেহতত্ত্ব, ভাবতত্ত্ব, গুরুতত্ত্বসহ অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোনো ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
হানিফ আরও বলেন, হানাহানির এই পৃথিবীতে যে অশান্তি চলছে; অসম প্রতিযোগিতার এই সময়ে সুফিবাদ ও বাউল তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে মনে হয়, আমরা সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারব। বিশ্বময় এই হানাহানির যুগে লালনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে শান্তিময় সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক লালিম হক।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এবং একতারা উপহার দেওয়া হয়।
পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবারের লালন স্মরণোৎসব একদিন আলোচনার মধ্যে (বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত) সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামীণ মেলা বন্ধ রয়েছে। তবে বাউল সাধু ও অনুসারীরা তাদের গুরুকার্য চালিয়ে যাবে।
বাউল সম্রাট লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছে তার অনুসারীরা।