টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালংয়ের বৃহত্তম রোহিঙ্গা শিবির। গত দুই দিনে এই শিবিরের তিন জন রোহিঙ্গার করোনা পজিটিভ ফলাফল এসেছে। তাই আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা প্রায় হাজারো রোহিঙ্গাকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
শিবির গুলোতে গাদাগাদি করে থাকা লাখো রোহিঙ্গার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) প্রথম দুই জন কোভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে।
শুক্রবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার।
মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার করোনা পজিটিভ হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে মেডিসিন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ক্যাম্পের এফ ব্লকের বাসিন্দা। সংক্রমণ রোধে ওই ব্লকের এক হাজার ২৭৫টি ঘর রেড মার্ক করে লাল পতাকা দিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। এসব ঘরে প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে মসজিদসহ আরও যেসব জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তি চলাচল করেছেন সেগুলো লকডাউন করা হবে।’
সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে বৃহস্পতিবার দুই জন ও শুক্রবার একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আক্রান্তসহ তাদের পরিবারকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে আরও যাতে ছড়িয়ে না পরে সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর আগে আড়াইশ’র বেশি রোহিঙ্গার নমুনা সংগ্রহ করে কোভিড-১৯ করোনা পরীক্ষার করা হয়েছে।’
এদিকে, শরণার্থীদের শিবির গুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে এমন আশঙ্কায় গত ১১ মার্চ থেকে কক্সবাজারের ঘিঞ্জি রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। এর মধ্যেই করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো।
কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় তিন রোহিঙ্গাসহ ১৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে মারা গেছেন একজন। তিনি রামু উপজেলার পূর্ব কাউয়ার খোপ গ্রামের বাসিন্দা।
এই পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেছেন, ‘ক্যাম্পে করোনা আক্রান্তের খবরে লোকজন ভয়ে আছে। ক্যাম্পে ঘিঞ্জি বসতি, সেহেতু ঝুঁকিটাও বেশি। আর এই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়, সেটিও অনেকে জানে না।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন নিশ্চিতে পুলিশ সেখানে আরও টহল বৃদ্ধি করবে। ইতোমধ্যে করেনা আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শে আসা পরিবার ও অন্য ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ জায়গাগুলো লকডাউন করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়েছিল চার লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।