অনলাইন ডেস্ক :
কলকাতায় বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বছরের এই সময়ে একটানা ১৫-১৬ দিন বৃষ্টি না হওয়া বেশ বিরল। এর ফলে কৃষিতেও যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনি মানুষকে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়ার সতর্কবার্তাও দিয়েছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর।
আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কলকাতাসহ সব জেলার তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের চাইতে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি ছিল বৃহস্পতিবার। একই পরিস্থিতি চলবে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তাপপ্রবাহের কারণ
সঞ্জীব বলেছেন, ‘৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এই অঞ্চলে হয়েই থাকে, তবে সেটা দেখা যায় এপ্রিলের শেষ দিকে। কিন্তু এবার সেটা মাসের শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে। আবার সাধারণত, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বছরের এই সময়ে তিন-চার দিন পর একটা করে কালবৈশাখীসহ বৃষ্টি হয়। এবার আমরা দেখছি দক্ষিণের বাতাস একদমই নেই, আর উত্তর-পশ্চিমা উত্তপ্ত বাতাস বয়ে চলেছে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এর ফলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একদম কম।’
বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া রোদে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কলকাতার আবহাওয়া অফিস। আর বাইরে বেরোতে হলে মাথায় ‘হ্যাট’ জাতীয় টুপি পরা, প্রচুর পরিমাণে পানি পানের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের উদ্দেশে আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ফসলের ক্ষেতে বেশি করে পানি দিতে হবে। আর যদি ফসল কাটার সময় হয়ে আসে, তাহলে একটু আগেই তা কেটে ফেলা যেতে পারে। আবার গবাদি পশুদেরও বারবার গোসল করিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর।
রাস্তায় মানুষ, গাড়ি কম চলছে
সকালে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম করলেও দুপুরের দিকে রাস্তায় মানুষজন খুব কমই দেখা যাচ্ছে কলকাতা আর জেলা শহরগুলোতে।
কলকাতার এক মিনিবাস অপারেটর সুশান্ত দেবনাথ বলছিলেন, ‘আমাদের তো বাইরেই থাকতে হয় কাজের জন্য। দুপুরে যাত্রী কমে যাচ্ছে, তাই দুটো বাস চলছে আমাদের রুটে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি সুযোগ পেলেই একটু গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিতে। পানি প্রচুর পরিমাণে খেতে হচ্ছে।’
আবার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রোহিত রথ জানাচ্ছিলেন, ‘রাস্তায় মানুষ দেখা যাচ্ছে মোটামুটি সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। তারপর রাস্তা প্রায় ফাঁকা। ওই সময়ের মধ্যেই কাজকর্ম সেরে সবাই বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। আর বাইরে বেরুলেই টুপি বা গামছা দিয়ে মাথা, কান, নাক ঢেকে বের হচ্ছে সবাই। ভিড় হচ্ছে ঠাণ্ডা পানীয়, ডাবের দোকান বা সরবতের দোকানগুলোতে।’
চিকিৎসকদের পরামর্শ
প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, গরমের জন্য শরীরে কোনো ধরনের অসুবিধা বুঝলেই ডাক্তারের কাছে যেতে। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছেন তারা।
তিনি আরো বলেন, ‘তৃষ্ণা না পেলেও পানি খেতে হবে, বাইরে বের হলে পানি সঙ্গে রাখুন। হালকা খাবার আর ফল, লেবুর শরবত, ফলের রস বা লাচ্ছি খেতে হবে এই সময়।’
শিশু আর বয়স্কদের বাড়ির বাইরে না বের হওয়াই ভালো। যারা কায়িক শ্রমের কাজ করেন, তাদেরও কিছুক্ষণ করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। খোলা জায়গায় কাজ করেন যারা, যেমন নির্মাণ শ্রমিক, তারাও বিশ্রাম নিয়ে যাতে কাজ করেন, সেই উপদেশ যেমন চিকিৎসকরা দিচ্ছেন, তেমনি দিয়েছে আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তরও।
সূত্র : বিবিসি