সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে

অনলাইন ডেস্ক :

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু আইন প্রণয়নসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ সকল সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়েছে।

 

শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।

 

তিনি বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ এক দিকে যেমন ধর্মীয় বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, অন্যদিকে সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বির্নিমাণে সম-অধিকার সম-মর্যাদা নিশ্চিতকল্পে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। পূজা উদযাপন পরিষদ উত্থাপিত দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটি দিতে হবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির (আদিবাসী) প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইনকানুন বাতিল করতে হবে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে। হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ট্রাস্ট পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজস্ব বাজেটে হিন্দুদের সংখ্যানুপাতে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং মঠ, মন্দির নির্মাণ ও উন্নয়নে প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।

 

দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১৬৮। এবার এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪৫, গত বছর ছিল ২৪২। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পূজোর সংখ্যা বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে। কিন্তু নির্বাচন ও নির্যাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী নির্বাচনের পূর্বাপর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বর্তমান সরকার এবং সকল ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাযথ ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানাই। বিশেষ করে অতীতে যে সকল ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ন্যাক্কারজনক ভূমিকা রেখেছে, তাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব, লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

আরো বলা হয়, ঈদ, পূজা, বড়দিন, বৃক্ষ পূর্ণিমা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দিয়ে সারিকভাবে উদযাপন করে থাকে। পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর উৎসবে সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে একাকার হয়ে সার্বজনীনভাবে উদযাপন করবে- এটাই হচ্ছে বাঙালির শাশ্বত চিরায়ত নীতি ও ঐতিহ্য। আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে ঈদ-পূজা-বড়শি বুদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোন ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা বাতিরেকে অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিবেশের জন্যই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিলেন। এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের সোনার বাংলা সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গা নানারূপে আবির্ভূত হয়ে আসুরিক শক্তিকে পরাভূত করে ত্রিভূবন রক্ষা করেন। কিন্তু অশুভশক্তি আজও সর্বত্র বিরাজমান। এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করলেও সাম্প্রদায়িক শক্তি নানা অজুহাতে নানাভাবে ধর্মীয় সংখ্যাল সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। সকল ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অনেকেই এইসব সংঘবন্ধ আক্রমণে সামিল হচ্ছেন। নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *