যশোর প্রতিনিধি :
তাঁদের ধারণা, এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ৬-১০ শতকের মধ্যের নিদর্শন। তবে ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে চাননি খননকাজে অংশ নেওয়া দায়িত্বশীল কেউ।তাঁরা বলছেন, জানুয়ারি মাস জুড়ে খননকাজ চলবে।অন্তত আরো আটটি বর্গে খোঁড়া হবে। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, ধনপোতা ঢিবিতে ৩৬ বর্গমিটারের আটটি বর্গে খননকাজ করছেন ১৭ জন শ্রমিক। ঢিবির একটি বর্গের খনন হয়েছে মাটির স্তর থেকে ২.৬১ মিটার।
স্থানীয়রা বলছেন, সনাতন ধর্মে যে বিরাট রাজার ইতিহাস রচিত হয়েছে সেই বিরাট রাজার বসতি ছিল এখানে। বহু আগে এখানে স্বরূপ নামে একটি নদী ছিল। সে নদীতে একসময় জাহাজ চলত। নদীর তীরে ছিল বিরাট রাজার বসবাস। তিনি এখানে বসে বিচারকাজ চালাতেন। ধনপোতা ঢিবি এখন খেদাপাড়া অঞ্চলের পঙ্কজ বিশ্বাসসহ তাঁদের গোত্রের পাঁচ থেকে ছয়জনের দখলে।
পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ৫৭ শতকের ঢিবিটি আমাদের ঠাকুর দাদাদের পৈতৃক সম্পদ। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনো বসতি দেখেননি।তিনি বলেন, ঠাকুর দাদারা বলতেন, একসময় সন্ধ্যায় এখানে আপনা-আপনি উলুধ্বনি ও শঙ্কধ্বনি শোনা যেত। এখন অবশ্য সেসব কিছু নেই।
প্রতাপ বিশ্বাস আরো বলেন, আমরা এখানে চাষাবাদ করি না। ঢিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ভরে আছে। আশপাশের শত শত বসতির গবাদি পশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই বাগান থেকে।
সুকুমার সরকার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ৩০-৪০ বছর আগে একবার ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ি হইল। সেবার পাথরের সিঁড়ি পাওয়া গিল। আমি এক মণ ওজনের একটি পাথর কুড়িয়ে নিছিলাম। পরে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়ে গিল।
ফিরোজ হোসেন নামে এক যুবক বলেন, এই ঢিবি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ির কথা শুনে দেখতে আইছি। এখানকার বড় বড় গাছ কেউ কাটার সাহস করে না। একবার শুনেছি, গাছ কাটতে এসে শ্রমিকের মুখ দিয়ে রক্ত উঠেছিল। এই ঢিবি নিয়ে অনেক ভয়ের গল্প আছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ধনপোতা ঢিবি খননের ফলে এখন পর্যন্ত কয়েকটি চওড়া ইটের দেয়াল উন্মোচিত হয়েছে। দেয়ালের ইটের মাপ ৩২✘১৬✘ ৫.৫ সেমি. ও ৩৬✘২২✘৬ সেমি। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সাথে মণিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ৬-১০ শতকের মধ্যের।
তিনি বলেন, ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা দেখে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। খননকাজ শেষ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এখানে উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল ছিল। কাজ শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।