ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছায় ৫০০ বছরের পুরানো গদখালীর কালী মন্দিরকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী পৌষমেলা শুরু হচ্ছে কাল থেকে। মেলাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুর্ণাথীরা তাদের মানত পূজা অর্চনা ভক্তিভরে করে থাকেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহকরা উল্লেখযোগ্য কোনো পাঠ্য পুস্তকে এ মন্দিরটির সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ না করলেও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা এর স্থাপনকাল খ্রিস্টীয় ১৪৬২ খ্রিস্টাব্দে বলে দাবি করেন।
বিগত কয়েক শ বছর ধরে মন্দিরটিকে ঘিরে পালিত হয়ে আসছে পৌষমেলা। দেশের ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর হাজার হাজার ভক্তের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই তিন দিন। পৌষকালী মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে কয়েক শ বছর ধরে এই মন্দিরটিতে ঘটপূজা পালিত হতো।
বৃহস্পতিবার পরিক্রমায় স্থানীয় প্রবীণদের মুখে মুখে ফেরা ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দিতে ইংরেজ শাসন আমলে পর্তুগীজ দস্যুরা প্রতি রাতেই এলাকায় ঢুকে বাঙালি মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন করত। এক রাতে ঝিকরগাছার গদখালীতে হরিহর নদের পাশে বয়ে যাওয়া কাশ বনে ঘেরা একটি গ্রামে চড়াও হয় ইংরেজী পর্তুগীজ দস্যুরা। এই গ্রামের বাসিন্দা কমলেসের বাড়িতে হানা দিয়ে পর্তুগীজ সৈন্যরা তুলে নিয়ে যেতে চায় বৃদ্ধ কমলেসের ষোড়শী কন্যা মাদলসাকে। বান্ধবীরা মাদলসাকে সখি মাদল শাহ বলে ডাকত। গ্রাম জুড়ে তখন রাতে নীরবতা। সদ্যুদের হানায় শ’ শ’ নারীর চিৎকারে গ্রামের বাতাস ভারী গয়ে ওঠে। ঠিক সেই সময় মাদলসাকে তুলে নিতে এসে তার রূপ যৌবন দেখে পর্তুগীজ দস্যু রডারিক বিস্মিত হয়। পরে অন্যান্য ডাকাতদের নিবারণ করে দস্যু রডারিক তার সঙ্গীদের গ্রাম থেকে চলে যেতে বলে।
মাদলসার প্রেমে মত্ত হয়ে ডরারিক সন্যাসী জীবন বেছে নিয়ে সখী মাদলসাকে বিয়ে করে ওই গ্রামে থেকে যায়। দুই ধর্মের দু’জনের প্রেম প্রণয়ের সূত্রধরে রডারিক উপসনার জন্য গড ও কালীকে সমভরে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিষ্ঠা করেন কালী মন্দিরটি। যা পরবর্তী কাল থেকে গদকালী কালী মন্দির বলে পরিচিত পেয়েছে। ওই সময় এক যুদ্ধে রডারিকের মৃত্যুর পর সাথী মাদলসা তার পথ চেয়ে ওই মন্দিরেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়।
মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সুভাস ভক্ত বাবুল জানান, প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ আমবস্যার তিথিতে এই মেলা বসে, তা চলে তিন দিন। মেলাকে ঘিরে এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের সৃষ্টি হয়। আগামী শুক্রবার মেলা শেষ হবে।