‘করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মাস্কের জন্য হাহাকার, উৎপাদন বন্ধের পথে’

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ১১৫টি দেশে ছড়িয়েছে এই মারণ ভাইরাস। রোববার (০৮ মার্চ) সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। নতুন এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার মজুদ করছেন। তরতর করে বেড়েছে ফেস মাস্কের চাহিদা। ফলে বিশ্ববাজারে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের কয়েক দিনের মধ্যেই চীনে মাস্কের ঘাটতি দেখা দেয়। এবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও চরম মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে। এটা চলতে থাকলে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চরম বিপাকে পড়তে হবে। কারণ চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক ব্যবহার করা অত্যাবশ্যকীয়।

ডিলমেড-পার্ক মেডিক্যাল সাপ্লাই সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ব্রান্ডের মাস্ক বাজারে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। চীন থেকে মাস্ক প্রস্তুতের সরঞ্জামাদি ও উপকরণ এই সপ্তাহের মধ্যে না আসলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য তাদের মাস্ক বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা আইনহর্ন বলেছেন, ‘আমাদের কোম্পানিতে মাস্ক তৈরির জন্য ১০০ লোক রাতদিন কাজ করছে। তারপরও আমরা চাহিদা মোতাবেক সাপ্লাই দিতে পারছি না। আমাদের তৈরি মাস্কগুলো শহরতলির হাসপাতাল এবং ৯১১ এ ফোন দিয়ে যারা চাহিদা দিচ্ছে তাদের দিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাঁধে এখন অনেক বড় দায়িত্ব, কিন্তু উপকরণ স্বল্পতায় আমাদের উৎপাদন বন্ধের পথে।’

আইনহর্নের ধারণা একই সংকট বিশ্বব্যাপী চলছে। বর্তমানে ১০০ টির অধিক দেশে মারাত্মক ভাইরাস উপস্থিত থাকায় মেডিক্যাল সংস্থাগুলি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় মুখোশের চাহিদা মেটাতে পারছে না। সরকার প্রথমে মাস্ক রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল, ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ মাস্ক রপ্তানি হয়েছে,আর সেগুলো কিনে মজুদ করেছে জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রে মাস্কের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়, করোনাভাইরাসে নিউইয়র্কে প্রথম আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর পর। মাস্কের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ। এতে সেখানে চরমভাবে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মাস্কের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে অধিকাংশ দেশে। চাহিদা বাড়ায় অনলাইন কেনাবেচার সাইটে একটি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার টাকায়।

বিশ্বজুড়ে ফেস মাস্ক ঘাটতির কারণে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন চীনের শেনজেন-এ মাস্ক তৈরির জন্য একটি আলাদা কারখানা স্থাপন করেছে। এ থেকে বাজারে মাস্কের চাহিদা আন্দাজ করা যায়। ফক্সকন সাধারণত অ্যাপলের আইফোন তৈরি করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ মাস্ক উৎপাদন করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে তারা। এমনকি ঘাটতি দেখা দিয়েছে রেসপাইরেটরেরও। মাস্কের চেয়ে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে রেসপাইরেটরগুলো বেশি কার্যকরী। হংকংয়ে ফার্মেসিগুলোয় দেখা গেছে ক্রেতাদের লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মাস্ক কিনছেন মানুষ। মাস্কের চাহিদা এত বেড়েছে যে, কিছু ফার্মেসি ক্রেতাদের কাছে বিক্রিযোগ্য মাস্কের সংখ্যা সীমিত করে দিয়েছে। একজনের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে না।

ফিলিপাইনে সরকারি উদ্যোগে হাইস্কুল ও কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সেখানকার বাজারে মাস্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ম্যানিলা, পাগাদিয়ান সিটি ও বুকিদননের মতো শহরগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত মাস্ক। থাইল্যান্ড মাস্ক রফতানি সীমিত করে দিয়েছে।

ফ্রান্সে রেসপাইরেটরি মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কলমি হোপেন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় উৎপাদন চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে। ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মী খুঁজছে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রের ৯৬ শতাংশ ফার্মেসিতে সার্জিক্যাল মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে। এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ১১৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এতে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ২৭ জনের, আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৮১ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *