

বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে একই পরিবারের বাবা-ছেলেসহ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। একদিনের ব্যবধানে অসুস্থ থাকা আরো ৭ জন মারা গেছেন।
বগুড়া পুলিশ বিভাগ বলছে, ১০টি লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে জানা যাবে তাদের মৃত্যুর কারণ। অপর দু’জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এদিকে, মদপানে অসুস্থ রঞ্জুর ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোমবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন। এই মামলায় বগুড়া শহরের পারুল হোমিও হল, খান হোমিও হল ও পুনম হোমিওসহ কয়েকজন হোমিও ব্যবসায়ীকে দায়ী করেছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে এখন পর্যন্ত চারজন মারা গেছে। অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিষাক্ত মদপানে সর্বশেষ মারা যাওয়া তিনজন হলেন, বগুড়া শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার পাদুকা শ্রমিক প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), বগুড়া সদরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার রিকশাচালক আব্দুল জলিল (৬৫), ফাঁপোড় পশ্চিমপাড়ার রিকশাচালক জুলফিকার আলী (৫৫) এবং মঙ্গলবার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দুরুলিয়া গ্রামে বিষাক্ত মদপানে মারা যায় মেহেদি হাসান (২৫) ও উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল আহাদ (৩০)।
এর আগে সোমবার জেলা শহরের কয়েকটি এলাকায় মারা যায় পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার প্রেমনাথ রবিদাসের পুত্র সুমন রবিদাস (৩০) ও একই পরিবারের সদস্য রামনাথ রবিদাস (৬০), পুরান বগুড়া তিনমাথার জিলাদারপাড়ার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬৫), ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ার এলাকার দিনমজুর মো. পলাশ (৩৫), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেন শ্রমিক সাজু প্রাং (৫৫) ও মোজাহার আলী (৭৫) ও কাহালু পৌর এলাকার অটোরিকশার চালক আবুল কালাম (৫০)।
এদিকে পুলিশ বলছে, মোজাহার আলীসহ দুইজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ কারণে ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
মারা যাওয়া সুমন রবিদাসের ভাই সাগর রবি দাস জানান, ময়নাতদন্ত শেষে তার পিতা প্রেমনাথ রবিদাস, ভাই সুমন রবিদাস ও কাকা রামনাথ রবিদাসের লাশ বুঝে পেয়েছেন। তার পরিবারে একদিনে তিনটি লাশ সৎকার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বগুড়া সদর থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে পুরান বগুড়া, ভবের বাজার, কালিতলা, ফুলবাড়ি ও কাটনারপাড়া এলাকায় আলাদা করে বিষাক্ত মদপান করে বেশ কয়েজন।
বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু মিয়া (৪০), ফুলবাড়ী এলাকার বিদ্যুতের মিস্ত্রি আইয়ুব আলী (৩৯) ও একই এলাকার পায়েল (৩৮)।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির জানান, রঞ্জু মিয়ার ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় পারুল, পুনম, খান নামের তিনটিসহ কয়েকটি হোমিও হলের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত হোমিও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আম্বার হোসেন জানান, মঙ্গলবার শাজাহানপুর উপজেলার দুরুলিয়া গ্রামে বিষাক্ত মদপানে মারা গেছে খবর পেয়ে মেহেদি হাসান (২৫) ও উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল আহাদ (৩০) নামে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ দুটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে মেহেদী পেশায় একজন থ্রী হুইলার সিএনজি অটোরিকশা টেকনিশিয়ান ও আহাদ পেশায় একজন ভুমি সার্ভেয়ার।